উজ্জ্বল ঘোষ-এর গুচ্ছ কবিতা
উজ্জ্বল ঘোষ-এর গুচ্ছ কবিতা
এক হও, মরে যাও, জন্ম নাও, বাঁচো
পথিক, তোমায় খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে যে!
সহস্র কাচের খণ্ড বয়ে ক্লান্ত তুমি?
বিষণ্ণ হোয়ো না সখা, মানুষ তো কাচেরই কোলাজ।
এ জঙ্গলে গালা পাওয়া যায়
এ অরণ্যে ফাঁপা যন্ত্র সুর খুঁজে পায়।
দেখো, দূরে অরণ্যের ধমনী ছড়ানো
অমোঘ প্রবাহ হয়ে গান বাঁধো, গাও
ধমনীর অন্ধকারে গলা ছেড়ে গাও।
এসো, সঞ্জীবনী গালা দিয়ে তোমাকে সংগ্রহ
করি
জাগাই গ্রন্থের স্রোত, নিহিত গাঙুর
হে অপাপবিদ্ধ, পরিধান খুলে ফেলো
আমাতে প্রবেশ কর'
এক হও, মরে যাও, জন্ম নাও, বাঁচো।
জলের পুরাণ
মন্ত্র পড়া শেষ হলে একে একে বেজে ওঠে
শাঁখ। দামোদর লিখতে বসে। কখনো মিহির কখনো-বা খনা হয়ে আঁধারের ল্যাপটপে লিখে রাখে
বহতা কাব্যকাহিনি। বুড়ি মালভূমির কোল থেকে বয়ে আসছে এই মৌসুমি জল। জলের পুরাণ।
একটি নদীর বুকে তেরো নদীর সুর। যাদের ছাকনি আছে তারা ছেঁকে নেয় সম্পদ। আমরা
দুঃখসম্পদে বাঁচি। ফসলবলির পুজো চালু আছে আজও জলের গাজনে।
বয়ে চলে মহামায়া জল। দামোদরে বয়ে চলে শ্রীমতী জল। দু-পাড়ের অন্ধকারে জ্বলে ওঠে বাল্বের আলো। ধিকিধিকি গ্যাসের আগুনে ফোটে দুধ। দূর থেকে ভেসে আসে ইতিহাস পাঠ।
হে আগুন
হে আমার পাইলট অদূর আগুন,
তোমার শিখায় জ্বলে অদ্ভুত নীরব;
হরিদ্রা হলকায় ছুটে আসে নীরবের রব;
গলিত দেহের বাঁশি শোনায় মিয়াঁ কি টোড়ি;
অমরত্ব চেয়ে ফেলি উজবুক মানুষের মতো!
তাসখন্দ কবরের বুকে কাঁদে সম্রাটের বীজ,
খানাখন্দ গহ্বরের বুকে মরে সরীসৃপ প্রাণ;
তবু আমি অমরত্ব চেয়ে ফেলি বাসমাখি
সেপাইয়ের মতো।
থাপ্পড় কষিয়ে বল', তুমি-আমি কেউ নই,
অমরত্ব মরণেরই নাম।
নির্মল ঝিলের ধারে গৌর বক্ষ চিরে দেখাও
আমাকে—
বাঁশির আকাশপথে শ্রীমতীর গ্রাম।
বড়দি পাহাড় ও কংসাবতী
লাল বনপথে নিজের পায়ের স্বর বাচালতা
লেগেছিল।
বসে পড়ি কিছু দূরে, পাতা ছাওয়া বড়দি
পাহাড়ে।
আসন পাথর থেকে অপলক দেখি—
শ্রীমতী স্তনের মতো বেঁকে গেছে কংসাবতী
নদী;
স্তনের ভিতর খেলা করে মাছ আর জলীয় সূর্যের
দুধ।
জেলের পা ছুঁয়ে, ধীরে, বয়ে আসে জলের
বিস্তার।
এই অর্ধচন্দ্রাকার শান্ত পদধ্বনি,
সবাক তরঙ্গ, কার?
জেলের, জালের, না জলের?
বড়দি পাহাড় থেকে চাকোলতা পাতা হয়ে দেখি—
মায়াবী স্তনের মতো বেঁকে গেছে কংসাবতী নদী।
উদ্ভিদ পাখি
বহু কষ্টে সূর্যালোক জোগাড় করেছি
খনিজ এনেছি খুঁজে মাটির পাঁজরে
ধমনীর শুদ্ধ জল ঢেলেছি দু'হাতে
এভাবে পরম যত্নে পুঁতেছি ডানার বীজ খিন্ন
ভূতলের ইতিহাসে
এইবার ডেকে আন' আগুন বাজার
যতেচ্ছ মেশাও বিষ শীতের সবুজে
যত খুশি অস্ত্রাগার আঁকতেই পার'...
আমার নিভৃত চোখ বাসন্তী হাসবে
আশ্চর্য উদ্ভিদ পাখি ভূগোল মাতিয়ে দেবে বাঁচার ধ্বনিতে
Comments
Post a Comment