বিদুর ব্লগজিন।। উজ্জ্বল ঘোষ-এর কবিতা।।


উজ্জ্বল ঘোষ-এর কবিতা 


শূদ্রবীণা

শূদ্র শব্দে গাঢ় অন্ধকার,

শূদ্র শব্দ নদী—

বইছে মহা জল, ছলাৎ এবং ছল !

 

শূদ্রনদীজলে শূদ্রবীণা বাজে, বাজে বুঝি মাতা ও সন্ততি?

দোআঁশ মাটির মতো মন বাজে কার ?

কেন শুনি আধপোড়া অভ্যাসের দিনে

উদ্ভিদের প্রাণপণ ডাক, বারবার ?

 

সুবর্ণ বৃক্ষের নীচে বয়ে যায় মোহাজের জল,

ছলাৎ এবং ছল, গৌরবের স্নিগ্ধ স্মৃতি, বঞ্চনার গুপ্ত ইতিহাস !

ওই আমাদের পিতৃপুরুষ নিষ্কম্প শুয়ে আছে

শোকপর্বে মায়েদের অভিশাপ শোনা যায় ওই

পরশুরামের হাতে ওই দেখো ধারালো কুঠার

মুন্ডু-কাটা ধড় থেকে ফোয়ারা উঠেছে অপরূপ!

যাকে দেখা যাচ্ছে হাস্যোকরোজ্জ্বল, স্থির,

      সে কি তুমি— মাতা ও সন্ততি?

 

শূদ্রবীণা বাজে, বাজে ওই আমজনতার সুর

বাহুবল বাজে, বাজে প্রচণ্ড সহন

বাজে মন্ত্র— আনৃশংস্য— পাথরের গায়ে

দয়া বাজে আকাশের নীলে; তারই মাঝে

থেকে যাব শূদ্রনদীজলে, ছলাৎ এবং ছলে

গঙ্গামাটি গায়ে মেখে ভরাব' ভারতশস্যভূমি ...

 


মুরগির খাঁচা

 

নির্লিপ্ত কসাই দেখি, আর দেখি মুরগির খাঁচা।

মায়া হয়, বলি, "হে মুরগি, ক্ষমা করো!"

কাকিমা বলেন, "ধর্মব্যাধের দোকান থেকে ঘুরে এসো ভাই!"

 

মুরগিরা ফ্যাক করে হাসে !

খাঁচার ভিতর থেকে মুরগিরা হো হো করে হাসে !

হাসি কি ম্যাজিক জানে? নতুবা কীভাবে খাঁচাটাই

আয়নায় বদলে যেতে থাকে! আর তখনই পিছনে—

 "হে মুরগি, ক্ষমা করো",  বলে ওঠে, নির্লিপ্ত কসাই!

 

বাগান

 

আমার বাগান নেই, গাছে জল দেওয়া-টেওয়া নেই।

গাছ কিন্তু ভালোবাসি আমি, মাটি-ফুঁড়ে-উঠে-আসা ভালোবাসি;

উদ্ভিদের ধারণায় আলো আনি, চিন্তাজল ঢালি...

 

গাছ বড় হয়, বলে, "আমার ভেতরে

আয়, গান ধর, রক্তের ভেতর হাঁট,

ভাতের হাঁড়ির মতো দুই বাহু তুলে নাচ, ঊর্ধ্বে তাকা, ধীরে।"

 

আদ্য মূল থেকে গান আসে, ডাক আসে

নীলাভ নীরব থেকে; মহাশূন্য ছেয়ে দেয় উদ্ভিদের ঢেউ ...

 

রাত্রির অরণ্যে স্পষ্ট দেখা যায় আমার বাগান

 

 


Comments