চন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
লকডাউনের কবিতা
চন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
১।
একটি ঢিলের চারপাশ চেপে ধরেছে সুতো। আমি
তাকে ধরে ঘুরপাক দিই। আর নিজেকে পৃথিবী ভাবি
চারপাশে যে দুপুর, পার হই তাহাকে, সময় -ঘড়ি
মণিবন্ধে নেই, সেও মোবাইল কোটরে পালিয়েছে। শূন্য এ জীবন শূন্য মাস শূন্য দিন। চার দেওয়ালের পর অল্প পাতা এক গাছ বেলিয়াতোড়ের কথা বলে
২।
ভূতগ্রস্থ এই জীবন। উপরে রহস্য -বিভা
নীচে শান্ত কুয়োতলা অর্ধেক আলোর ছটা তীব্র
অন্ধকার তারও যে অন্য এক আলো আছে, বুঝিনি
কুয়োর ভিতরে জল সেও কালো মন্ত্রপূত
ডাকিনী গাছের ডালে যদি দোল খায় এই ভয়ে
একটি মান্দার গাছ পিছনে পিটুলি আর অন্ধকার
এখানেও ওর কোনো বিকল্প অস্তিত্ব নেই শুধু
৩।
দুপুর, সে অনন্ত। চুমুকে চুমুকে তাকে পান
এরপর শূন্য থেকে ছুঁড়ে দিই অনন্ত গেলাস
পরান বঁধুয়া তাকে দু 'আঙ্গুলে তীব্র ধরে ফেলে
পরিপূর্ণ দিয়ে দ্যায়, বেঞ্চ আর অভুক্ত পরাণ
পরাণের সাথে খেলি ওপাশে যে আমার মরণ
তাকেই পেয়েছি এই খালাসী টোলায়। দরবার
পরিযায়ী শ্রমিক, নুন, শালপত্রে ছোলার গুঞ্জন
ভরে উঠেছে, হে অমোঘ, এই ভাবে ঋণ শোধ করো
৪।
কী নীল কী নীল। আহা, নীলাম্বর দেখিনি কখনো
অথচ সতত আমি মনে মনে কৃষ্ণ কথা ভাবি
বৃন্দাবন কাকে বলে কোন্ ছবি মধুবনী হয়
এমন কী ভাবরস লাল হলুদ পরমা গোলাপী
ভিতর সে খুঁটে নেয় খুঁড়ে দিল জীবনের ভিত
কতোটা পাথর পেলে তবে সেই ভিত গড়ে নেবো
৫।
সরে যাচ্ছে একটু একটু করে আমার সন্তান। আমি
মোবাইল ঘুরিয়ে ওর মুখ দেখি।আমার ঘরের পাশে
গাছ আর ওর পিঠে শান্ত দীঘল ফ্ল্যাটের ছায়া। জানিনা কোথায়
সেই অসম্ভব গম্ভীর পাহাড় আর মাথার উপর'বার '
তাতে,শরীর সাজিয়ে বসে আছে এক নক্ষত্র সুন্দরী
লকডাউনের রাতে মাঠ সেও স্তব্ধ আর চুপ
এখানে এমনই ধারা আমি কোনো শহর দেখিনি
আমার সন্তান কবে কোল থেকে নেমে, হামাগুড়ি দিয়ে
অন্য শহরের দিকে চলে গ্যাছে। ওর চুল ওর হাসি
সমস্তই চেনা তবে অবচেতনায় ...এই জীবন আরো
কতোটা যাবো হে, কতো যেতে হবে যেভাবে পিঁপড়ের
সারি ওঠে আমের ভিতর শুষে খায় কোনো ঘুন পোকা
সারারাত কাঠ কাটে ধুলো কুয়াশায় ঢাকে ওর ডানা
লকডাউনের রাতে ব্যক্তিগত শোকসভা মুলতুবি রেখে
আমিও পাহাড় ভাবি, ফ্ল্যাটের বিন্যাস ভাবি। নিজে
মুখ দেখতে গিয়ে অন্যমনস্কের মত ওকে দেখছি
Comments
Post a Comment