বিদুর ব্লগজিন : অনুপম মণ্ডলের কবিতা
অনুপম মণ্ডলের কবিতা
নিঃসঙ্গ কেতকির মতো
১।
ছায়াঘন পাকুড় গাছের মাথায় ঝুপসি আঁধার নেমেছে। কেউ নেই ঘাটে। হাওয়ায় দুলছে আকন্দ ফুলের ঝাড়। কেউ কি নিঃসঙ্গ হতে হতে নিজেকেই দূরে ফেলে আসে। বুঝিনি,ও কার মূর্ছাহত প্রভাস্বর যত দূরে আঁখি মেলি। অমল মহুয়ার শাখা। জল হতে উথ্থিত তরঙ্গেরা, এগিয়ে চলেছে, বন সকল দগ্ধ করিতে করিতে।
২।
কবেকার পুরনো একটি হাওয়া এসে কাঁপায় স্বর্ণচাঁপার ডাল। ওই ভাটফুলের জঙ্গল। তার ভেতর থেকে একটি দুটি করে শ্যালা পোকা জেগে। আধফোটা চোখে তাকিয়ে দেখে, কোথাও সাপের শুকনো খোলস ঘিরে হেলে পড়ে আছে অপরাহ্ন। ঝিঙে ফুল ঝরে যায় স্মৃতির মতো। আর জলের তল সেইখানে, ঘাই মারে মাছেরা।
৩।
টুপটাপ করে শিশির ঝরে পড়ছে চইলতার মাথার উপর। কচি ঘাস। বুনো শটির গাছ। চকিতে, কোনো গুইসাপ হেঁটে যাওয়ার খসখসে শব্দ। আর একটা গাঢ় সবুজ অবিচ্ছিন্ন প্রবাহের মতো, দূরে, ওই কি চক্রবাল?
৪।
চির অচেনা সেই অসুরীর বাঁশি, ওগো, কোথায় বেজে ওঠে। ঘুমিয়ে পড়েছে, তালের শুকনো খোলা। তৃণদাম। আর বিমল কুয়াশা এসে, ঢেকে দিয়ে গেছে কাঠচাঁপা। তবু, ও থেকে থেকে কিসের আজ্ঞা প্রতীক্ষা করিছে! একটা ঘন সবুজ রহস্য, নাগলিঙ্গম গাছটি বেয়ে, কোথাও, উঠে যাচ্ছে, অনন্তলোকের দিকে।
৫।
দুপুর ঘন হয়ে যখন, রক্তপলাশের উপর তার, রৌদ্র বিছিয়ে দিয়েছে; দূর থেকে দেখা যায়, জনহীন মাঠের মধ্যে বাবুইতুলসী গাছটি, একটুখানি মাথা তুলেছে—যেন কোন সকরুণ তারার নির্জনতা, সূক্ষ্ম ঊর্ণায় জড়িয়ে, এসে নেমেছে ওইখানে। ওইখানে অন্য কোনো কলনাদ নাই। বালিকা বঁধুর উলুধ্বনির মতো, কেবল ঝিঁঝিঁ ডাকছে।
৬।
নাগবল্লীর মাথা প্রভাতের আলোর কাছে নত হয়ে আছে। জলে ভেসে থাকা সবুজ শেওলা। জলের অতল তলে ডুবে ডুবে, দু’একটি বালিহাঁস, তুলে আনছে ছোট মাছ, গুগলি শামুক। পাড়ে করমচা গাছ। বৈঁচির ঝোপ। অযত্নে পড়ে থাকা শশার মাচা। হয়তো-বা দূরে, জিয়লের বেড়ার ফাঁকে, অইখানে, সিঁদুরের ধুলোর বিভা লেগে আছে।
৭।
ঘন নীলাভ তটরেখা—পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সূর্যডোবা আলোর খানিকটা যেন নেমে আসছে। মুলী বাঁশ। শালফুল। কুমারী লতা। তার ফাঁক দিয়ে শান্ত কোনো সোঁতা বহে চলেছে—ওই দূরে, সমুদ্র দেখা যায়। গর্জায়মান।
Comments
Post a Comment