বিদুর ব্লগজিন : দেবজ্যোতি রায়ের কবিতা




দেবজ্যোতি রায়ের গুচ্ছ কবিতা 

দিব্যজ্ঞান

দোলনায় শুয়ে আছি
মুখে ফিডিং বোতল
তুমি অল্প দোলা দিচ্ছ, অল্প অল্প হাওয়া
আমার জীবদ্দশা দুলে উঠছে 
কাচের চুরির টুংটাং-এ।

দোলনায় শুয়ে শুয়ে দেখি
তুমি বাঁকা আয়নায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছ 
নিজের জৈব ছবি
আপাত শান্ত জলে লেজের ঝাপট

শিশুদের মজা লাগে
তাদের পৃথিবী সহজ সরল
আমার শৈশবও তুমি দীর্ঘতর কর
ফাঁকে ফাঁকে দোলনা দুলিয়ে দাও মধুর ঝংকারে।

বড়ো হলে মৃত গয়নার সাথে কথা বলব হিব্রু ভাষায়
ধুয়ে মুছে সাফ করব বন্দুকের নল।

আমি শিশুখাদ্য আমূলের নিশ্চয়তায় মাথা রেখে
আবার ঘুমিয়ে পড়ি
জেগে উঠি,
চারপাশে দেখি
ডোরাকাটা মানুষেরা হেঁটে যায়,
রাস্তা পার হয়।

অনতিদূরেই কার্তুজের মুখে ফোটে হাসি

তুমি মায়া, তুমি বোধি, স্তব্ধ লিপস্টিক!



নীরবতা পালন করুন 

একটি দৃশ‍্যে আমি চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে
ছুটতে চেয়েছি ডনের ভঙ্গিতে
আবার অন্য দৃশ্যে গুলি খেয়ে লাশ
ভিলেন চরিত্রে আমি কিছুটা কৌতুক চাই
উৎপলবাবুর মতো।

কত ইচ্ছে ছিল বাঁশি হাতে কদমতলায় একটু দাঁড়াব
বাঁকেবিহারীর ঢঙে
গোপিনীরা যৌথ নৃত‍্যে তোলপাড় করে ফেলবে
আকাশ বাতাস

পায়ে ব্লেড, জিভে ব্লেড নিয়ে নেমে পড়ব
মোরগ লড়াই-এ

এমনকী ডোমের কাছে কমিশন দাবি করব―
আমার অর্ধেক লাশ আগুনে পোড়াও
পাবলিক ফাঁকি দিয়ে বাকি অর্ধেক
টান মেরে ফেলে দাও অনন্ত নালায়

কী আর বলতে পারি
আমার স্বপ্ন নিয়ে, আপনারা মহাজন
দু-মিনিট, প্লিজ, নীরবতা পালন করুন।


 
এলোকেশী অন্ধকার 

গানের বাগানে মৃত্যু, গল্পের ভেতর মৃত্যু 
বিশাল হাঁ-মুখ খুলে মৃত্যু ছুটে যায় 
গগনদার চায়ের দোকান থেকে
শূন্য স্টেশনে

মৃত‍্যুকে খুঁজে খুঁজে আমি পৌঁছে যাই
ঘোষ বেকারিতে
পোড়া পাউরুটির মধ্যে মৃত্যুর ছায়া
রাস্তার কুকুর আর গজেন পাগল চেনে 
এইসব ছায়া
তারা জানে অস্তিত্বের অন্য অবয়ব।

ক্রমশ উপমাগুলি বিপ্রতীপে সরে যেতে থাকে
টোকা দেয় বন্ধ দরজায়।
ভূতুড়ে শোকেস খুলে বের হয়
অবাস্তব জামা
নিরালম্ব শরীরের খোঁজে ব্রিজ পার হয়

শরীরের চারপাশে এলোকেশী অন্ধকার
ঘন হয়ে আসে।



 অনুমান 

আমি মধুমতী স্টিমারের বাতিল সারেং

পরিচয় লুপ্ত করে গভীর মাছের মতো
জল কেটে কেটে চলে যাই।

অভিজ্ঞান রেনট্রি জঙ্গলে লুকিয়ে রেখেছি

পুড়ে যাওয়া প্রকৃতির ছবি
তদন্ত রিপোর্ট
সব আছে চামড়ার নীচে

ওপরে শ‍্যাওলার স্তূপ
প্রাচীন পাথর

অজ্ঞাত নদীর স্রোত রক্তের অতলে
আমি মধুমতী স্টিমারের বাতিল সারেং।

আমাকে চেনো না তুমি
শরীরে জমেছে পলি, মৃতজীবী ফুল।
শুধু প্রচ্ছদ অনুমান করে পাঁচ কথা ভাবো

লোকটা প্রেমিক নাকি মুসাফির?
অথবা সিঁদেল চোর?
হতে পারে পেশাদার খুনি!



সিদ্ধান্তহীনতা

মনোবেদনার বীজে ফুটেছিল ফুল
ধূসর পাপড়িতে তাই এত নির্জনতা।
চারপাশে থমথম করছে রোদ
চৈত্রদুপুরের।

আমি সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে
কার্নিসের প্রান্তে দাঁড়াই

ঝাঁপ দেব কিনা?

এই রোদ ডাকিনীবিদ‍্যা জানে
বালুচরে খেলা করে হরিণের মতো
হাজার ব্লেডের আলো ছড়িয়ে রেখেছে
নির্বাক উঠোনে।

আমার পায়ের ছাপ পার হয় লৌকিকতা,
মন্থর দুপুর
পার হয় শরীর ও কঙ্কালের শেষ বোঝাপড়া

শুধু সিদ্ধান্তহীনতা থেকে যায়
শলাপরামর্শ করে কার্নিসের সাথে।











Comments