বিদুর ব্লগজিন : দীপান্বিতা সরকার-এর কবিতা


দীপান্বিতা সরকার শূন্য দশকের কবি। জন্ম ও বেড়ে ওঠা দক্ষিণ কলকাতায়। ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা, পেশা কন্টেন্ট রাইটিং এবং শিক্ষকতা। মাত্র ২০ বছর বয়স থেকেই লিখতে আসা, ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ছটি কবিতার বই ----
১। ঝিমরাতের মনোলগ (অভিযান, ২০১১)
২। একান্ন থানের নাও (কবিয়াল, ২০১৩)
৩। পাশের উপগ্রহ থেকে (সৃষ্টি সুখ, ২০১৫)
৪। ইতি গন্ধপুষ্পে (শুধু বিঘে দুই, ২০১৬)
৫। হিমঝুরি (আঙ্গিক মাস্তুল, ২০১৭)
৬। কুশের আংটি (ধানসিড়ি, ২০১৮) 


দীপান্বিতা সরকার -এর কবিতা 

এই যে লিপ্সা

এই যে লিপ্সা তোমার পোশাকে লেগে ছিল
এই সেই নেশাচরাচর
স্খলনে বিস্মৃতি আসে।
উন্মাদ সমুদ্রের তীরে হৃদয়কে নগ্ন করে
যে পালিয়ে গিয়েছে
এই সেই লোভ,
শোনো
এই সেই অবোধ্য কামনা তোমার

এই সেই ছাই। 
  
তোমার মুখ পালটে পালটে যায়
পালটে পালটে যায় তোমার ছায়া।
কেউ কি দেখে হৃদ-যমুনার তীরে বসে 
তোমার নিঃশ্বাসের মুদ্রা? 

নক্ষত্রজলে ধোয়া প্রতিটি বনপুষ্পে, কাকলিতে
প্রতি শব্দের বেদনায় ওর স্নান 
ওর স্নান তোমার লেখায়
তোমার কাগজে, সাদা কাগজে ওর সামান্য বিশ্রাম।

যতদিন না ওই জ্যোৎস্না তোমার হয়, ওই গান 
তুমি হৃদয়ভুক,
তুমি চিতচোর। 
যতদিন না গলন্ত এই চোখ
দুই হাতে তুলে নেবে
ততদিন তুমি পালাবে, 
কষ্টে দুমড়ে মুচড়ে
টেনে হেঁচড়ে খুঁড়িয়ে চলবে
রেললাইন, বস্তি আর চটচটে বিষাদের প্রান্তর ধরে একা...
তুমি নেবে--
আর্ত চিৎকার 
ভিখারির, দলিতের, প্রেমিকের, পাহাড়ের
বুঝবে না, শুধু নেবে... 
দেবে না কিছুই।   

মাংসের ওপর পাতা ঝরে পড়ে
রাতের পায়ের পাতায় ঝরে পড়ে
সেই সব শিল্পসম্মত অশ্রু

 তোমার সন্তাপের দ্যুতি।  

পত্রঘন দিন এই রাত এই ঘনশোকসম্ভাবনা
কোন পথ কোন পথ তার?
যে দিকে তিলকশান্তি, তিলেক মাত্র প্রেম
ভিক্ষালব্ধ মায়া তার চৈতন্যের কোন প্রান্তে নত?
খুঁজি তাকে, তাকে খুঁজি এসো
পথিকের মত, শ্রমিকের মত।
কোথায় রুগ্ন, দুঃস্থ, ব্যথাতুর বয়োঃবৃদ্ধ, শিশু ও নবীন
কোথায় নাবিক কোন ভুলে গেছে ছায়াপথ, আকাশের তারা, 
খুঁজে বের করি। 

যে বীজ পুঁতিনি
সেই গাছের জন্য এত মায়া!
ঘুমের কুসুমে রাখা আরও ঘুম...

কত ছুঁচ মেরুদণ্ডে গাঁথা হলে

জন্ম নেবে আবার
নতুন নতুন অপমান
আরও নতুন কোনও ইচ্ছা। 

এ মত লেখার শেষে
প্রণয়বিমূঢ় ওই গর্ভপত্রখানি
টেনে বের করো।

উড়ন্ত শিখার ভঙ্গিমা নিয়ে
বলো মেঘে মেঘে এত শিলাজল 
কে দেখেছে? কে ডেকেছে
তার নির্জন বরফ 
চেয়ে নিতে শান্ত অনামিকায়? 
কার অক্ষরে ছিল এত জটিল ফেনা ! 

আজ্ঞা দাও, উলটে দিই দান
ভেঙে ফেলি এই দেহতট, 
মাধবের পোড়ো মন্দির। 

Comments