বিদুর ব্লগজিন : সুদীপ চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতা
সুদীপ চট্টোপাধ্যায়-এর গুচ্ছ কবিতা
অধিকার
১.
সে ছিল চতুষ্পদ, মনোরম ছায়া
আমার শরীর থেকে লাফ মেরে
মাঝে মাঝে চলে যেত দূরে
ফিরে এসে মনের ভেতর ঢুকে
খেত কিছু দ্বিধাময় কথা
হারাবার আগে তার বয়স ফোটেনি
শুধু আমার শরীরে ছিল উপোসের দাগ
সেটুকু ছড়িয়ে রাখি পথে
কোনওদিন পথ চিনে যদি ফেরে দেহের ভিতর
২.
হাওয়া আসে, তোমার মেধাবী নিয়ে
আসে মেঘ, আঙুলে আঙুলে
কর গুনি, মন থেকে পাখি গেলে পড়ে থাকে
তোমার বাড়ির পথ— পায়ে পায়ে সফেদ উড়াল
এভাবে যাব না ব'লে হেসে উঠি
হাসির রঙিন দাঁত আনমনে গিলে নেয়
মাঠের ইঁদুর— গোপন ফসল হয়
হয় আরও অনামিকা অনেক কিশোরী হাতে
হাওয়া আসে, রঙের মেধাবী নিয়ে
নিজের খেয়াল মতো এঁকে দেয় পাহাড়িয়া গ্রাম
সেটুকু সামনে রেখে হেঁটে চলে চোখের প্রণাম
৩.
আধকাটা ফলে তার হাসি লেগে আছে
যদিও সে বহুদিন ঝিনুকের খোলে পেতেছে বসত
সে তেমন তথাগত নয়। নয় খুব গৃহের বাগান
গাছের শরীরে শুধু খোদাই করেছে ঘুম
ঘুম তাই হরিয়ালি হল
আধেক আঁধার খেয়ে সেও আজ দারুণ যুবক
এভাবে শরীর হয়। শরীরের সাত কোণে বিবাদ দাঁড়ায়
দাঁড়িয়ে দেখেছে ঋতু— চারিদিকে পরিখা বসানো--এই তার অমোঘ প্রণতি
তাই আজও দেহ খুলে ভাবে
এমন মেঘলা দিনে
কীভাবে সে আনবাড়ি যাবে
৪.
গাছের শরীরজুড়ে মনে হয় তোমার বাকল
এদেশে মানুষ নেই, আছে কিছু রৌদ্রপ্রতিম
ধারণা স্পষ্ট হলে, দেখি ঠোঁট পাখি নিয়ে ওড়ে
রেখে আসে চোখময় ডালে
তুমি তো জুয়াড়ি খুব, বাজি ধর সুদূর পাহাড়
তাদের শরীর থেকে কেবলই গড়িয়ে নামে আলোর তুষার
দিনমান পাতা পড়ে
গাছের শরীরজুড়ে, মনে হয়, মাটির গভীর থেকে উঠে এল আমাদের পরিযায়ী হাড়
৫.
হাত থেকে উঠে আসে হাসি। হাত এত কাঙাল হয়েছে, যেন ঠিক ক্যানভাসে নিজেকে রাঙাবে
রঙের অধিক তার মুখ ফুটে আছে—
আছে লোভ, লোভের বাসর
তীক্ষ্ণ নিষাদকাল, তোমাকেই প্রেম বলে জানি
আঘাত উলটে নিয়ে এই হাত প্রণয় চেয়েছে
প্রথাগত ক্যানভাস, কোনওদিন স্মৃতি ম্লান হলে হাসির আদল থেকে রঙের দোসর নিয়ে
ফিরে এসো প্রথাহীন হাতে
কবি পরিচিত :
সুদীপ চট্টোপাধ্যায় শূন্য দশকের কবি। বাঁকুড়া জেলায় তিনি বসবাস করেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি —
১। যেখানে ভ্রমণরেখা ( অভিযান)
২। আলফাটোন (ধানসিড়ি )
৩। মুজরিমপুর (কবিতাডিহি)
৪। শমীবৃক্ষের নীচে (ঐহিক)
৫। আহারলিপি (তবুও প্রয়াস)
৬। একলামি (আজকাল)
Comments
Post a Comment