বিদুর ব্লগজিন।। অমিতাভ মণ্ডলের দীর্ঘ কবিতা


কবি পরিচিত
অমিতাভ মণ্ডল : জন্ম ১৯৫৬। প্রথমদিকে গল্প লিখলেও আটের দশক থেকে ধারাবাহিকভাবে কবিতা লেখায় নিমগ্ন আছেন। পত্র -পত্রিকায় লেখার সংখ্যা খুবই কম, নেই বললেই চলে। মাত্র দশ বছর কাজ করার পর সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছা-অবসর নিয়ে বর্তমানে কলকাতায় থাকেন। 

তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ :
আলো নয় অন্ধকার নয় (অনুবর্তন ১৯৯৪)
ধুলা ও আলিঙ্গন ( অনুবর্তন ১৯৯৪ )
নিশীথমুরলী ( অনুবর্তন ১৯৯৫ )
উজানের কবিতা ( অনুবর্তন ১৯৯৭ )
রৌদ্র নামা ( অনুবর্তন ২০০৬ ) 
বিহঙ্গলীলা ( অনুবর্ন ২০০৭ )
বড়ো গল্প (অনুবর্তন ২০০৭ )
সুরলোক (আদম ২০০৯ )
বর্ষা মঙ্গল (আদম ২০১০)
রূপশালা (আদম ২০১৪)
হৃদাকাশ (আদম ২০১৬)
চরণ পথ (আদম ২০১৬)
সুন্দর (আদম ২০১৮)
উৎসব (আদম ২০১৯)

অমিতাভ মণ্ডলের দীর্ঘ কবিতা 

প্রবাস (অংশ)

নাস্তিকের 'না' টিও
কেমন ঘরের গোপাল হয়ে উঠছে ...

দরজার ভারী পর্দা,ফুলতোলা হাল্কা পর্দা জানালার
                      পুচ্ছ দুলিয়ে চমৎকার উড়ছে
না, না, করতে করতে, যদি ঘরে ঢুকে, দ্যাখো
         অর্গ্যানে ঝড় তুলে সুচিত্রা সেন গাইছেন
          কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে ...
            অবাক হয়ো না, নাস্তিকই থেকো 

... তারপর তুমি বিপ্লবের ডাকে ঘরছাড়া হবে
ভোরবেলা কালোপিসি উনুন ধরালেন
বেগুন ভাজা, আলু ভাজা, পাতলা মুগের ডাল
আর আগর বাতির মত ভাতের ধোঁয়া উড়ছে
... তুমি পেট ভরে খেয়ে নাও, নাস্তিকই থেকো

গোধূলিতে মন্দিরে ঘন্টা বেজে উঠলে
            দমকা হাওয়ার মত
           একঝাঁক পায়রা উড়ে গেল
            জগৎ রঙিন, এই ভ্রম হল
পদ্ম বিলের পারে
যখন সন্ধ্যা, ভূবন বিবশ হয়ে আসছে
বাদুড়েরা বেল গাছে অশান্ত হয়ে উঠছে
আমি কি সুমনার সর্বনাশ করলাম?
                  এরকম ভাবতে ভাবতে
                   আলোহীন, বাতাসহীন 
ধপ করে ঘাসে বসে পড়লে ...
তুমি কাঁদছ কি কাঁদছ না, কেউ জানে না
                             তুমি নাস্তিকই থেকো 

কালপুরুষের ডাকে মহাপৃথিবীর আহ্বানে
                      যখন বেরিয়ে পড়েছে
       সাফল্য, ব্যর্থতার অর্থ খুঁজতে
       মনে পড়ল, বাবাকে, মাকে
        সকালের ওষুধ দেওয়া হয়নি
     ... তুমি আবার গৃহে ফিরবে কি?
একটা বল গড়িয়ে যাচ্ছে ফাঁকা মাঠে
রাজপথে ঘর্মাক্ত অশ্ব হাঁপাচ্ছে
এক খন্ড ধবল মেঘ
খোলা স্তন, কোলের খোকাকে
                      ভিজিয়ে দিচ্ছে ...
               তুমি নাস্তিকই থেকো

কতদিনের বেওয়ারিশ লাশ
        পড়ে আছে ইঁট ভাটায়
লোকটা ধনী ছিল, না নির্ধন বোঝা যাচ্ছে না
ইঁটের লাল ধুলো, মৃতের মুখ, পরিচ্ছদ 
                                   ঢেকে রেখেছে 
ডেঁয়ো পিঁপড়ে ঘুরছে শুকনো পাতায়, ঘাসে
একটা গিরগিটি অস্থির হয়ে উঠছে 
এই সব লোকালয়ের বাইরে, এখনও অজানা
যদিও সবকিছু জানে ভবঘুরে, আউল বাউল,
ক্ষুধার্ত ফকির, চোর ডাকাতের দল
... তুমি কীভাবে যেন এসে পড়েছ এখানে
মধুর মলয়ে জলের গন্ধ, ধানের গন্ধ
... রহস্য থাকুক, বা না থাকুক
তুমি অন্ধ হও, বা চক্ষুষ্মান
                         নাস্তিকই থেকো

আস্তে আস্তে তুমি চিঠি লেখা শিখছ 
শিখছ কীভাবে গরম চায়ে
                         বিস্কুট ডোবাতে হয়
... এরপর তুমি আত্মহত্যা করবে
         না, দোলে ভুবনডাঙা যাবে
          তা, তুমিই ভেবে নিও
... এবার হঠাৎ জোরে হেসে উঠলে
                            ঈশ্বরের মতোন
সঙ্গিনী ভয় পেয়ে খামচে ধরল তোমার হাত
বৃষ্টি পড়ছে, না খোলা রোদ ছড়িয়ে পড়ল
              কেউ জানে না ; তুমি নাস্তিকই থেকো

মা যশোদা
অন্নের থালা এগিয়ে দিয়ে বললেন
থামতে হয়, বাছা 
সে তুমি ভগবান মানো, বা না মানো
না থামলে, কীভাবে শুনবে গহন গান
কীভাবে শুনবে আর্তের গোপন ক্রন্দন
কীভাবে দেখবে পর্বত চূড়ায় বাদল, তুষার

গোপাল যখন থামল
এক আকাশ শূন্য থমথম করছে ...
তারপর, হে বান্ধব,
তোমার আর কোনো খবর নেই ...
যারা খবর আনতে গেল
ফিরে এসে বলল, যোজন যোজন পুষ্পক্ষেত
খরস্রোতা নদী, আর উদ্দাম ঝর্নার কথা ...

কবেকার গোপাল, চিরচঞ্চল, চিরমোহন
              তুমি নাস্তিকই থেকো। 


Comments