বিদুর ব্লগজিন : সাক্ষাৎকার।। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর সাক্ষাৎকার
'আমার কবিতার পৃথিবী একটি বিশেষ অনুভব অথবা একটি বিশেষ পাখির চোখকে নিয়েই নয়। বরং কবিতা লেখার সময় আমি যুধিষ্ঠিরের মত আমার চারপাশের পৃথিবীকেই নানাভাবে দেখতে চাই। '
নান্দীমুখ : সমাজ সচেতন বাংলা কবিতার
বিকাশ ও আন্দোলন সম্পর্কে কিছু বলুন, বিশেষ করে চল্লিশ দশকের 'প্রগতি সাহিত্য 'আন্দোলন সম্পর্কে। আমরা মনে করি আপনার কবিতা সেই ধারায় চলেছে, এই বিষয়েই বা আপনার মতামত কি?
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : বাংলা কবিতার সমাজচেতনা মঙ্গলকাব্যের সময় থেকেই আমরা অনুভব করে আসছি। আধুনিক বাংলা কবিতার যাঁরা ভগীরথ– ঈশ্বর গুপ্ত, মাইকেল, হেমচন্দ্র, নবীন— তাঁদের প্রত্যেকের কবিতায় তাঁদের নিজস্ব সমাজভাবনাগুলি বারবার উঁকি দিয়েছে। কিছুটা পিছুটানের ব্যাপার ঘটেছিল রবীন্দ্রনাথের কৈশোরকালে, তাঁর আত্মকথনে এবং প্রেমের কবিতায়। কিন্তু আধখানা রেঁনেসার জোয়ার তাঁদের স্থির থাকতে দেয় নি। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গোবিন্দচন্দ্র দাস, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত এবং মাঝেমধ্যেই রবীন্দ্রনাথ কবিতার মাধ্যমে তাঁদের নিজস্ব সমাজভাবনাগুলিকে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। এঁদের পরেও এলেন নজরুল, বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র। শেষোক্ত কবিরা তাঁদের কবিকর্মের কৈশোরকালেই সাম্যবাদের প্রেমে পড়েছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ এবং বিজয়লাল প্রৌঢ় বয়সে সাম্যের সঙ্গে গান্ধীবাদকে মেলাতে চেষ্টা করেছেন। তখন পৃথিবী জুড়ে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলছে।
চল্লিশের 'প্রগতি সাহিত্য ' প্রথম থেকেই আমার কাছে খণ্ডিত এবং যান্ত্রিক বলে মনে হয়েছে। বাংলা কবিতায় শ্রেণীসচেতনতা অথবা সাম্যবাদের ভাবনাটা চল্লিশের কবিরাই প্রথম আনেন নি। গোবিন্দচন্দ্র দাস, সত্যেন্দ্রনাথ, নজরুল, বিজয়লাল, প্রেমেন্দ্র মিত্র অনেক দিন আগেই আমাদের কাছে ঐ বার্তা বয়ে এনেছেন। রবীন্দ্রনাথের দুটি অবিস্মরণীয় কবিতার কথাও এই প্রসঙ্গে ঘুরে ফিরেই আমার মনে আসে—'সুখ দুঃখ '('বসেছে আজ রথের তলায় স্নান যাত্রার মেলা') এবং 'দুই বিঘা জমি'।কিন্তু এঁরা প্রত্যেকেই এঁদের নিজস্ব কবিতাভাবনাগুলি আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন একক প্রচেষ্টায়। চল্লিশের যুগে ব্যাপারটা ঘটেছে একটি সংহত ঐকতান মধ্যে দিয়ে, ঢাক-ঢোল বাজিয়ে, মিছিল করে।
... আমার কবিতা কোনোদিনই চল্লিশের প্রগতিশীল কবিতা বা কবিদের কাছ থেকে অন্ন বা জল আহরণ করেনি। বরং আমি নিজের কবিতাকে যতটা বুঝি, আমার কবিতার শিকড় অন্যখানে। সেখানে আজও যাঁরা জলসিঞ্চন করেছেন তাঁরা সবাই দলছুট একক কবি— যেমন জীবনানন্দ, তারপর নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথ।
একথা ঠিক যে, চল্লিশের যুগে সুকান্ত, বিমলচন্দ্র ঘোষ, অরুণ মিত্র, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সমর সেন, মণীন্দ্র রায়, মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায় বেশকিছু স্মরণীয় কবিতা লিখেছেন। সে সব কবিতা আজও আমাদের টানে, আমাদের পিপাসায় জল দেয়। ...কেন আমি চল্লিশের প্রগতিশীল কবিদের পতাকা নিজের কাঁধে বইতে রাজী নই, সে বিষয়ে বোধ হয় আরেকটু পরিস্কার করে বলা দরকার। চল্লিশ দশকেই 'ফ্যাসীবিরোধী, প্রগতিশীল' কবিদের সঙ্গে আমার সহাবস্থান ঘটেছে। না ঘটে উপায় ছিল না। জাপ- তাড়ানোর যুগে আমিও কমিউনিস্ট পার্টির ভলান্টিয়ারী করেছি। পরে, যখন 'ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি'র সঙ্গে আমার কোনো নাড়ির সম্পর্ক ছিল না, তখনও 'পরিচয়' 'অরণি' 'অগ্রণী' পত্রিকায় অজস্র কবিতা লিখেছি। আমি কমিউনিস্ট নই, তা সত্ত্বেও অরুণ মিত্র এবং বিমল চন্দ্র ঘোষ— এই দুই অগ্রজ কবির কাছ থেকে যথেষ্ট প্রশ্রয় পেয়েছি। নিশ্চয়ই কোথাও আত্মিক যোগাযোগ ছিল।
... কিন্তু যেদিন থেকেই আমি কবিতা লেখা শুরু করেছি, আমার যখন যা মনে হয়েছে তাই আমি লিখেছি। বিভিন্ন পত্র -পত্রিকায় ঐসব কবিতা ছাপতে দিয়েছি। ... আমার কবিতার পৃথিবী একটি বিশেষ অনুভব অথবা একটি বিশেষ পাখির চোখকে নিয়েই নয়। বরং কবিতা লেখার সময় আমি যুধিষ্ঠিরের মত আমার চারপাশের পৃথিবীকেই নানাভাবে দেখতে পাই। এতে করে, প্রগতিশীল কবিতা বলতে আপনারা যা বোঝেন (অর্থাৎ আপনাদের প্রশ্নগুলির ব্যাখ্যা আমার কাছে যা মনে হয়েছে) তার সঙ্গে আমার অনেক কবিতারই লড়াই বেঁধে যায়। আমি কোনো রাজনৈতিক কর্মী বা যোদ্ধা নই; পৃথিবীটাকে শেকড়সুদ্ধ নেড়ে দেবার ব্যাপারে বস্তুত আমার কোনো ভূমিকাই নেই। বরং Cultural Revolution -এর ব্যাপারে যদি কোথাও আমার সামান্য পরিশ্রমও থেকে থাকে— যার মাধ্যম আমার কবিতা, তার জন্যই আমার সমস্ত যুদ্ধ।
নান্দীমুখ : যে সময়ে সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুভাষ মুখোপাধ্যায়রা মার্কসবাদের অঙ্গীকার নিয়ে কবিতা লিখছেন সেই সময়ে আপনার কবিতা অন্য জগতের। ('মাঝে মাঝে মালটানা গাড়ির শব্দ ','মুখোশ')।এ ঘটনাকে আপনি বর্তমানে কীভাবে দেখেন?
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : যে সময় আমি কবিতা দুটি লিখেছি (যদিও মাঝখানের ব্যবধান প্রায় এক যুগের) তখন আমি পাশাপাশি অনেক রাজনৈতিক কবিতাও রচনা করেছি। 'মুখোশ'লেখার ঢের আগে ১৯৪৬ সনে 'যতীন দাসের ফটো' এবং 'রানুর জন্য', 'মৃত্যূত্তীর্ণ' ও 'উলুখড়ের কবিতা'য় প্রকাশিত 'হাতি', 'রুটি দাও''বেকার জীবনের পাঁচালী' 'দোল ও পূর্ণিমা' (এসব কবিতা তো আমারই লেখা) বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। মার্ক্সবাদে আমার অঙ্গীকার কোনোদিনই সুভাষ বা সুকান্তের সঙ্গে সমান্তরাল রেখা ধরে চলেনি। ...আমার রাস্তা প্রথম থেকেই ছিল ভিন্ন। আজও তাই। 'মুখোশ' 'প্রভাস' অথবা আমার ব্যক্তিগত প্রেমের কবিতাগুলি থেকে আমি কোনোদিনই মুখ ফিরিয়ে নেবো না। আজও যদি তাদের কাছাকাছি কোনো প্রেম বা অপ্রেমের কবিতা আমার কলম থেকে বেরোয়, তাদের আমি অবশ্যই পত্রিকায় ছাপতে দেবো। বইয়ে ছাপবো। আমাদের দেশ অথবা পৃথিবী এখনও কোনো স্বর্গরাজ্য বা তার কাছাকাছি কোথাও পৌঁছাতে পারেনি। আমাদের রাজনৈতিক কর্মীদের তাই তো সারা জীবনের লড়াই থেকে যায় এই পৃথিবীটাকে বদলে দেবার। আমার কাজ মাটিতে কান রেখে কোথায় কি হচ্ছে, তার সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার। আর, তখনই আমাকে ঘুরে ফিরে একটি করে নতুন 'মুখোশ' লিখতে হয়। লেখা উচিত।
নান্দীমুখ : আপনি কখনো কখনো anti-poetry-র সপক্ষে কথা বলেন। বিষয়টিকে একটু ব্যাখ্যা করুন। anti-poetry বলতে কি committed কবিতা বলেছেন? anti-poetry কি কাব্যগুণহীন জার্নালিজম? তাহলে এই সব রচনার উদ্দেশ্য কি সাধিত হয়?
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : anti-poetry কথাটি লাতিন আমেরিকার পাবলো নেরুদা প্রমুখ কয়েকজন কবির মুখে প্রথম শোনা যায়। তাঁদের বক্তব্য অনেকটা এই রকম : শুধু কবিতার খাতিরে কবিতা লেখার দিন আজ ফুরিয়েছে। আজকের দিনে কবির আনুগত্য কবিতার চেয়ে ঢের বেশী নীরস পৃথিবীর প্রতি, যে পৃথিবী শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একটি বিশেষ শ্রেণীর (অথবা বর্ণের) মানুষদের (অথবা, অমানুষদের) দ্বারা লুণ্ঠিত ও ধর্ষিত হচ্ছে। তাঁদের মতে কবিতা হলো ঐসব শ্রেণীশত্রুদের বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াইয়ের অস্ত্র— যে কারণে, কবিতার ভাষা হবে কর্কশ এবং ধারালো। তাতে কোনোরকম পোশাকী শব্দ থাকবে না, প্রসাধন একেবারেই না। এ থেকে আমরা যতটুকু বুঝতে পারি, তাঁরা কবিতাকে একাঘ্নী বাণের মতো ব্যবহার করতে চাইছেন এবং নিঃসন্দেহে তাঁরা যুদ্ধাভিলাষী।
বিপক্ষকে চিহ্নিত করার এবং সরাসরি বিদ্ধ করার ব্যাপারটা পৃথিবীর সব দেশের সর্বকালের কবিতাতেই কম বেশী খুঁজে পাওয়া যায়। সেদিক থেকে anti-poetry কথাটি শুনতে নতুন হলেও ব্যবহারিক দিক থেকে তারও একটি ঐতিহাসিক স্বাচ্ছন্দ রয়ে গেছে। আধুনিক বাংলা কবিতাতেও একই ধরনের বেশ কিছু রচনা আমাদের চোখে পড়ে।
... এই প্রসঙ্গে আর একটা কথা। যাঁরা কবিতা মানেই বিশুদ্ধ কবিতা— হরবখৎ এ ধরনের কথা বলেন, তাঁদের সঙ্গে anti-poetry- র হয়ে আমি নিশ্চয়ই লড়াই করে থাকি এবং তাই করবো। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমি মনে করি কবিতাকে সব সময় anti-poetry-র নিয়ম মেনে চলতে হবে। একটি বিশেষ সময়ে একটি বিশেষ ধরনের লড়াই চালাতে গিয়ে মানবধর্মে উদ্বুদ্ধ কবিতামাত্রেই anti-poetry-র শরণ নিতে হয়, এছাড়া তার জন্য উপায় থাকে না। anti-poetry-র সপক্ষে এর বেশী আর আমার কিছু বলার নেই।
Anti-poetry কাব্যগুণহীন জার্নালিজম, এমন কথা আপনাদের মনে হচ্ছে কেন? বাংলা কবিতায় গোবিন্দ চন্দ্র দাস, নজরুল এবং সুকান্ত মাঝেমধ্যেই এই কাব্যরীতিকে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করেছেন। কোথাও যে তাঁদের কবিতা কাব্য-গুণহীন জার্নালিজম হয়ে যায় নি, এমন কথা খুব জোর দিয়ে বলতে পারবো না। একজন কবি যখন প্রচলিত সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে মুখর হয়ে ওঠেন এবং একটি কি দুটি কবিতা নয়, অনেক কবিতা দিয়ে তাঁর প্রতিবাদকে জোরালো করতে চান, তখন মাঝেমধ্যেই তাঁর কবিতার বাঁধন আলগা হয়ে যায়, বারবার ব্যবহারের ফলে কিছু শব্দ তাদের ধার হারিয়ে ফেলে। 'কমিটেড' কবিদের এই ক্ষতি স্বীকার করতেই হয়। দেখা দরকার কবি ক্রমাগত প্রতিবাদ করার কালে কিছু সত্যিকারের সার্থক কবিতা (anti-poetry কথাটি এখানে স্বাভাবিক ভাবেই উচ্চারিত হবে) লিখতে পেরেছেন কিনা। যদি শেষপর্যন্ত ঐ কাজটি তিনি করে থাকেন তাহলে কবির বিরুদ্ধে অথবা anti-poetry -র বিরুদ্ধে সজ্ঞানে (অথবা অজ্ঞানে ) জেহাদ ঘোষণা করা একজন কবিতা-পাঠকের কাব্য-বোধ বা রুচিকেই আঘাত করবে। নজরুল অথবা সুকান্তকে তাঁদের কিছু অক্ষম কবিতার জন্য আপনারা নিশ্চয়ই বর্জন করবেন না।
নান্দীমুখ : যে কোন বাংলা লিটল ম্যাগাজিনেই আপনার কবিতা পাওয়া যায়। এত বেশী রচনার সবগুলিই উত্তীর্ণ হয় না নিশ্চয়ই, পুনরাবৃত্তি হবারও সম্ভবনা থাকে। সে সমস্ত লেখা ছাপানোর যৌক্তিকতা কি?
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : কোনো যৌক্তিকতা নেই। খারাপ কবিতা তো ইচ্ছে করে লিখি না ; অনেক সময় খারাপ কবিতা আমার ঘাড়ে চেপে বসে। বন্দি মুক্তি আন্দোলনের সময় একটার পর একটা কবিতা (?) এই পত্রিকায়, ঐ পত্রিকায় নিজে থেকেই পাঠিয়েছি। কোনটা কবিতা হলো আর কোনটা কবিতা হলো না— এটা ভেবে দেখার সময় তখন ছিল না। বিষয়টাই ছিল প্রধান। ফলে বহু 'কাব্যগুণহীন জার্নালিজম' হয়েছে। নকশাল তরুণ -তরুণীদের নিয়ে তখন পুলিশী তাণ্ডব চলছিল, সত্তর দশকের সেই কয়েকটা বছর শুধু প্রতিবাদ জানানোর জন্যই আমাকে শতাধিক কবিতা লিখতে হয়েছে। 'মুণ্ডহীন ধড়গুলো আহ্লাদে চীৎকার করে ','আমার রাজা হওয়ার স্পর্ধা ','রাস্তায় যে হেঁটে যায় ','মানুষখেকো বাঘেরা বড় লাফায় '— এইসব পুস্তিকাগুলি প্রধানত তারই ফলশ্রুতি। এইসব বইয়েও কিছু দুর্বল কবিতা রয়ে গেছে— বইয়ে নিইনি এমন আরও অসংখ্য কবিতা ঐ সময় একই বিষয় নিয়ে লিখেছি। সেইসব দুর্বল কবিতাও আমার কাছে তখন প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছিল। পরে সাধ্যমত বর্জন করেছি।
নান্দীমুখ : আনন্দবাজার-গোষ্ঠীর কাগজপত্রে আপনি লেখেন না। এ সম্পর্কে কি আপনার কোন সুনিশ্চিত সিদ্ধান্ত আছে?
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : ওঁরা লিখতে বলেন না, তাই লিখি না। 'দেশ 'বা 'আনন্দবাজার '-এ লিখলে আমি রাজা হবো, এমন কোনো শিশুসুলভ চিন্তা বা প্রত্যাশা আমার নেই। এখন শুধু এটুকুই বলতে পারি।
নান্দীমুখ : সাহিত্যিকদের সংগঠন সম্পর্কে আপনার মতামত কি? আপনার দীর্ঘ কবিজীবনে যে বিভিন্ন রকম সাহিত্য সংগঠন হয়েছে, তা আপনাকে কি কখনো কবিতা রচনার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে? এস্টাব্লিশমেন্টের বিরোধিতার ক্ষেত্রে কি এই জাতীয় সংগঠন একজন সৎ লেখককে সাহায্য করতে পারে?
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : ১) কোন্ সাহিত্যিকদের সংগঠন? ২) না। তবে লিটল ম্যাগাজিনগুলিকে যদি একটি করে সংগঠন ভেবে নেওয়া যায়, তাহলে উত্তর অন্যরকম হতে পারে। দৈনিক এবং সাপ্তাহিক গণবার্তার কাছেও আমার কিছু ঋণ স্বীকার আছে। ৩) এস্টাব্লিশমেন্টের বিরোধিতার জন্যই কি আপনারা সাহিত্যিকদের সংগঠনের কথা ভাবছেন? এত অল্পেই আপনারা সন্তুষ্ট হবেন? শুধু এস্টাব্লিশমেন্টের বিরোধিতা একজন সৎ লেখককে কীভাবে সাহায্য করতে পারে, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
নান্দীমুখ : আপনি মাঝে মাঝে নিজের অথবা অন্যের কবিতা বুলেটিন বা প্যামপ্লেট আকারে প্রকাশ করেছেন। এই জাতীয় প্রকাশনা অনেকটাই আপনি এককভাবে করেছেন। এই ধরনের প্রচেষ্টার পেছনে আপনার কি মানসিকতা কাজ করেছে বলে আপনার মনে হয়? এক্ষেত্রে সাহিত্যিকদের কোন সংগঠন কি অধিকতর সফল হতে পারে না?
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : চুপচাপ বসে না থেকে কিছু একটা করা। কোনো সংগঠন যদি এ ধরনের কাজে এগিয়ে আসতে চায়, সে তো খুবই ভালো কথা।
নান্দীমুখ : সাধারণত পাঠকরা প্রায়শই অভিযোগ করেন, এখনকার বাংলা কবিতা দুর্বোধ্য। অধিকাংশ পাঠক কবিতার দিকে পিঠ ফিরিয়ে থাকেন। ফলে কবিদের সঙ্গে ব্যাপক পাঠকদের যোগ তৈরী হচ্ছে না। এটাকে কি আপনি বাংলা কবিতার সংকট বলে মনে করেন? এ সংকট থেকে উদ্ধারের উপায় কি?
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : যাঁরা কবিতা পড়েন না, তাঁরা কী করে জানবেন, একটি কবিতা বোধ্য অথবা দুর্বোধ্য? কবিতা না পড়ে কবি বা কবিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনাটা সহজ। গোবিন্দচন্দ্র দাসের কবিতা তো অত্যন্ত সহজবোধ্য এবং মানুষের জন্যই তিনি কলম ধরেছিলেন। কজন প্রগতিশীল কবিতার পাঠক তাঁর নাম জানেন? সেদিক থেকে আমরা (বর্তমানের কবিরা) তো ভাগ্যবান।
সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ
ঋণ স্বীকার : নান্দীমুখ পত্রিকা, ১৯৮০
( 'নান্দীমুখ'-এর বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে)
Comments
Post a Comment