বিদুর ব্লগজিন : সৈকত দাস-এর কবিতা
সৈকত দাস-এর গুচ্ছ কবিতা
প্রবাহ
এক বটবৃক্ষের কোটরে
রেখে এসেছি নিজের অস্থিকলস,
আর তারই ছায়ায় ঘুমের ভেতরে হয়েছি পাথর।
তবু আকাঙ্ক্ষা জাগছে মনে—
নিজেকে টুকরো টুকরো করে লাল সুতোয় বেঁধে
ঝুলিয়েছি নীল সন্ধ্যায়।
আবার যেন আকাঙ্ক্ষার ভেতর তৈরি হচ্ছে
হাত পা হৃদয় ...
রেখা
রেখার ওপর বসে
গোকর্ণের গুণ বিচার করে পাখি,
মর্মের গহিনে বসে গাছ
অতলান্ত পাতার আড়ালে কাঁপে।
শূন্যতা নিয়ে বসে আছ দেহে
অথবা দেহের অবগাহনে চুপি চুপি ভাব
সে নদীর নাম।
কিছু নক্ষত্র খসে পড়ে হাতে—
সেখানে তোমার মুখ, আবছায়া।
এ ছাড়া এ-শরীরে আর-কোনো রেখা নেই।
অসুখ
অনেক দিন ধরেই সেখানে যাব ভাবছি।
দূরের গৃহস্থালি থেকে ভেসে আসা গান
কিশোরীর কান্নার মতো শোনায়—
পদ্ম পাতার গায়ে টলটল করে জল,
তারও নীচে মোহিনী সাপ।
গভীর রাতে বাড়তে থাকে জ্বর
নীল হয় শরীর।
ক্ষত
এই পথে সরে আসি
তোমার বুকের কাছে বার বার—
যেখানে বুনো ফসলের গন্ধে
এই হরিৎ জীবনের ক্ষয়
বিষাদের অগ্নি থেকে জন্ম দিচ্ছি তোমাকে।
সৌরপতনের জলে কচলে ওঠে স্মৃতি।
আকাশের গভীরতা মাপতে গিয়ে
মৃত্যু-উন্মুখ তারাদের বন্দরে
ভাসিয়েছি এই নীল শরীর,
তারপর অন্ধকারের সব স্তর ভেঙে ভেঙে
স্ট্রিট লাইটের নির্জন ঘুমের অলিন্দে
জেগে থাকি অভিনয়হীন।
চলে যাই নিজস্ব ক্ষতের দিকে।
সরস্বতী
তার দুটি চোখ
দেবীর পায়ের কাছে
বাসনাকোরক হয়ে খুলে যায়—
দেখে পীনস্তন থেকে নদী বয়ে নামে
শিল্পের গূঢ় আকাঙ্খায়,
সাদা পাতা নীল হয় ধীরে।
খরজ্যোৎস্না তখন আকাশে।
বিষাদ
রক্ত ও নুনে মিশে আছে স্মৃতি, শীতকাল,
মথের ভাঙা ডানা।
বাতাসের ঘুলঘুলি থেকে দেখি
সিপিয়া রঙের মেঘে জমেছে অসুখ।
আরও দূরে যাই
আরও দূরে গিয়ে নির্মাণ করি তোমাকে।
কবি-পরিচিত
পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক লাগোয়া রূপনারায়ণের পারে এক অখ্যাত গ্রামে সৈকত দাস-এর বেড়ে ওঠা। হৈহৈ রৈরৈ থেকে বহুদূরে তিনি একান্ত লেখায় নিমগ্ন থাকেন। এখনও পর্যন্ত তাঁর কবিতাগুলি গ্রন্থ-রূপ পায়নি। বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক এই কবি 'কালের কল্লোল' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করে থাকেন।
সৈকতের সঙ্গে একবারই দেখা হয়েছে। অল্পই পড়ার সুযোগ পেয়েছি। এই কবিতাগুলি শান্ত আর মগ্ন উচ্চারণের। ভাল লাগল।
ReplyDeleteসৈকতের কবিতা পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। অনেক ধন্যবা।
অসাধারণ।
ReplyDelete