স্বর্ণেন্দু সেনগুপ্ত ও অর্ণব পণ্ডা-র গুচ্ছ কবিতা
স্বর্ণেন্দু সেনগুপ্তের গুচ্ছ কবিতা
১.
যদি সে আসে
একটি সকালবেলা
সূর্যের রঙে ভরে ওঠে
এই আসা, আসার নিয়ম
সেখানে রয়েছে।
২.
আর কোন রঙ নেই
শুধু বিকেলের শেষটুকু
আসার প্রত্যাশা
এই আলো, হেসে উঠবার আমন্ত্রণ
তাকে ফিরিয়ে এনেছে
একটি নতুন নিয়ে
সে বসে আছে
আর এই অপেক্ষা,
হে নতুন, চিরনতুনের
একভাবে হেঁটে এসেছিলো
নতুন তোমার সামান্য পথ ধরে
হে নতুন, চিরনতুনের...
৩.
যদি সে হেসে ওঠে
সূর্যসকাল জুড়ে
সব রাস্তা অনন্তের
সে আছে
ছায়াজুড়ে
অস্থিতে মজ্জায়
প্রতিটি ঘুম
জেগে উঠবার আমন্ত্রণ
রাস্তায় রাস্তায় ফিরে আসবার ছায়া
তারা ফিরে আসে
সে দেখছে সেই ছায়াছবি
সকালের অনন্তমুদ্রায়
৪.
দূর থেকে
একভাবে
ফুলের উপমা
আলোর আগুন
তার কাছে
কথায় কথায়
সন্ধে নেমে আসে
নাম নেই
ঠিকানা শুধু ...
সৌন্দর্য জুড়ে এক
প্রকৃতিময়তা
ঠাঁই নিয়ে আছে
সেই আঁধার
গাছ থেকে গাছে
ফুল্ল
কুসুমিত
৫.
ভোরের আকাশ
আলোর তরঙ্গ
একটি নৌকা
দুটি পরস্পর
ছবি
বাতাস বয়ে যায়
আলোর একটি
অন্যটি ছায়ায়
স্থাপত্যরঙিন
আকাশ বয়ে যায়
শান্তির ছবি
মৃদুমন্দ
অঘ্রাণের মাঝে
আলো ও বাতাস
অর্ণব পণ্ডা-র গুচ্ছ কবিতা
চাপাতি
সারাক্ষণ চাপাস্বরে কথা বলছে কারা ?
অন্যমনস্ক মানুষ, যেন মূক ও বধির
একমনে মাটি কুপিয়ে যায়!
মাটি কোপানোই তার কাজ।
কাজ শেষ হলে রাতে তালসারি
মিশে যায় প্রান্তরে,হাওয়ায়।
সে হাওয়ায় মাত্র একবার
নড়ে ওঠে কুশপুত্তলিকা।
কালো চাদরের মধ্যে ঢেকে রাখা
ক্ষীণ শিখা, লন্ঠনের।
সেই আলো বের করে, ভরা ধানখেতে
মেয়েকে সনাক্ত করছে তার মা,অন্ধকার!
মাংস
লোহা তপ্ত হলে ঠিক মাংসল হয়।
পাশে রাখা জলপাত্র। হাপরের হাওয়া।
আহারের সামনে কেউ বসে আছে।
মাংসে নিমজ্জিত মন: কী স্বাদ ধারালো হলে!
লোহা মাংস,মাংস লোহা তপ্ত শলাকা
যে তাকে রন্ধন করে কামারশালায়
সে ক্রমশ বোবা হয়ে যায়!
চক্ষু পরীক্ষা
আয়নায় তাকান এবার।
বৃষ্টিধোয়া বর্ণমালা
দেয়াল পিছিয়ে গেছে
আমি পড়তে পারছি না।
বাম চোখ বন্ধ করে ডান চোখে তাকান
ডান চোখ বন্ধ করে এবার বাম চোখ...
খুঁজে বেড়াই মাতৃভাষা
কুয়াশা কুয়াশা ভোর
চশমা খুলে ফেলুন তবে।
এবার বিষণ্ণ চোখ বন্ধ করে দিন
আঁধারে বিষণ্ণ তারা
পাতার গভীরে ঢেকে রেখে দিন অল্প কিছুক্ষণ...
চিকিৎসক,ওহ্ চিকিৎসক
এখন সমস্ত কিছু স্পষ্ট,বর্ণময়!
বুদবুদ
ডুবুরি নেমেছে জলে। মাথায় লাগানো টর্চ
স্বপ্নটিকে খুঁজে খুঁজে যায়।কত না রঙিন মাছ
ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে আর পলকে মিলিয়ে যাচ্ছে...
বুদবুদ ওঠে মাঝে মাঝে।নিশ্বাস ত্যাগ করছে সে।
টর্চ ঘুরিয়ে সে তার বুদবুদটিকে ফেটে যেতে দেখে।
আবার নিশ্বাস ছাড়ে।লিপ্তপদে ভেসে ভেসে
শুধুমাত্র সামনের দিকে,চৌকো এক মাথা থেকে আলোটি নির্গত হয়
জানে না পেছন দিকে,কখনো পায় না টের,কী নিঃশব্দে
অন্ধকারে অনুসরণ করছে তাকে অতিকায় ক্ষুধার্ত হাঙর!
স্বধর্ম
গরাদের ঘুলঘুলি দিয়ে আজ দেখতে পেলাম
আলোভরতি পরিষ্কার আকাশ।
কীভাবে স্বধর্মে স্থির থাকা যায়,এই ছাড়া
দ্বিতীয় কোনো চিন্তা নেই আর।
এক একদিন মনে হয়,আমি
পিছমোড়া মাথাঢাকা,মরুভূমির মধ্যে হাঁটুমুড়ে বসে আছি।
কী সুন্দর এই দেশ।
এখানে গুলির শব্দ আকাশে মিলিয়ে যাবে।
তৃতীয় মানুষ পর্যন্ত শব্দ পৌঁছবে না!
Comments
Post a Comment