বিদুর ব্লগজিন || সৌরভ বর্ধন- এর গুচ্ছ কবিতা
সৌ র ভ ব র্ধ ন- এ র গু চ্ছ ক বি তা
ঘুম কোটরে জেগে
১.
প্রজাপতিবিহীন দুটি ডানা এই রোদ্দুরে পাতায় পাতায় উড়ে
বেড়াচ্ছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে পাখা। আমি ভাবলাম জানলার ধারে
বসেই যখন আছি, চলো লেখা যাক দু-চার লাইন, রাস্তায়ও
কোনো যানজট নেই তেমন। তবুও অদৃশ্য কোন্ ওজোনস্তরে
আমার অতিবেগুনী বুদ্ধি বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, আমি হাসছি,
আমি
খেলছি, গাইছি, আনন্দে ছত্রখান হয়ে উঠে বসছি ধ্যানে—
প্রাণে আমার কোনো ইঙ্গিত নেই। প্রাচীন ভাষা ও চৈতন্যে
চরাচর রৌদ্রকরোজ্জ্বল। আমি নীল আকাশে একক ঠেকনো
দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সকল ফাঁকফোকড় মুহ্যমান—
২.
আমার হাতে লেখা নেই; সংসারী লেখার মতো মহাস্থবির
কলকল নেই। আমার তলপেটে কেবল কালাচ বসে আছে।
ধর্মাবতার, ওই দূরে দেখুন ভাটার পাঁচিলে শ্যাওলা জমেছে,
লাল ইটের উপাদান খসিছে ভূমি 'পরে, তাহাকে আশ্রয় করি
জাগিছে বট ও পাকুড়। প্রাচীরগাত্রে আমার সাধের মেহগনি
তরতর করিতেছে, দুটি শাখায় অজস্র পাতা তীরতীর কেঁপে
উঠে। ভীষণ পবিত্র এক স্পর্শ; দিগন্ত বিস্তৃত হাওয়ার মতো
নিষ্পাপ। আমি কখনও তাকে ছুঁইনি। পাশে তো জল আছে,
মাটিও আছে; এখনও পৃথিবীতে বায়ু আছে, সূর্যের উত্তাপ
আছে এখনও আমার অঙ্গে অঙ্গে—
৩.
আমাদের মিলন তাই জরুরি হয়ে শুনুন ধর্মাবতার, একশো
চুয়াল্লিশ ধারা জারি করে দিন প্রয়োজনে। আমরা পঞ্চক,
আমরা হৃদয়গাত্র খসিয়ে জেনেছি অঙ্কুরোদগম কারে কয়!
আমরা হৃদিরূপ বন্ধন খুঁড়ে জেনেছি আবহবিকার ও মাটি
গঠন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সুস্থির দুটো স্তরের মাঝে
ফিরে যাওয়া, ফিরে পাওয়া সমতল রোদের মিহিমুঠো বুক।
যেখানে প্রেমিকার রূপ আকিঞ্চন করা অতি সহজ, মরসুমের
দীর্ঘতম ঘুম যেখানে আমার গর্ভে ভেদ্যমান, যেখানে সূক্ষ্ম
চুম্বন ঝরঝর ভেঙে পড়ছে একা : আমি সুযোগ
পেতে বসে
আছি সেখানে, ক্ষয়ে যাচ্ছে নিতম্বগুটি, প্রবাদপ্রতিম শ্লথে
দ্রুত সেজে উঠছে অকিঞ্চিৎ পাড়, পুরনো নাব্যতা নিয়ে আমি
গাছের শরীরে বৃক্ষ বদল করছি প্রিয়—
৪.
আমার হাতের জন্য অপেক্ষায় ছিল যে দোয়েল, হাত পেয়ে
মরলো সে। তার মৃত্যুর ভেতর ডুবে গেলো কিছু, এমন কিছু
যার উপযুক্ত কাব্যান্তর সম্ভব নয়। তাঁর সারাগায়ে কোনো
ক্ষত নেই, পা ভাঙেনি, ডানা ছুঁটে যায়নি, তবে কী যে হলো!
শুধু সকাল হলো যেই উড়তে ভুলে গেল সে, দাঁড়াতে ঘৃণা
করলো, নখরসহ চারটে আঙুল গুটিয়ে রাখলো, যতটা সম্ভব
দুই ডানা মুড়ে খুঁড়ে দিতে চাইলো মাটি, টুঁ শব্দহীন সুখে—
৫.
প্রতিবারই এমন বিচ্ছেদের পর আমি স্বভাবতই আরও
রোমাঞ্চিত হয়ে পড়ি। আমার মস্তিষ্কের কৈশিক ফাঁক দিয়ে
চুঁইচু্ঁই করে হাসে আমারই রঙিন মুখ। আমি দেখি ব্রহ্মদেশ
আমারই অস্তিত্বের ফেনায় ফেনায় মগ্ন। পিলপিল করে তার
নাভির গর্তে স্বাদকারক নেমে যায়; ল্যাম্পপোস্ট বেয়ে বমি।
আমি ক্যানারি পাখির পালক হই, সুপ্ত অহংকারের মাটিতে
আমার পা ডুবে যায় টনটন! সকল বর্ণনাকে লাথি মেরে
আমি দাঁড়াই লেখ্য মুদ্রায়, ছলছল পাতার কানায় টেনে ধরি
দৃশ্য, যে দৃশ্যের দু-ধারে কোনো দর্শনীয় স্তূপ নেই, শুধু
আছে
নিশির ডাক মাখা ভগাঙ্কুর আর তার ডানার আর্দ্র গন্ধ—
Comments
Post a Comment