বিদুর ব্লগজিন।। অর্ঘ্যকমল পাত্রের গুচ্ছ কবিতা।।


অর্ঘ্যকমল পাত্রের গুচ্ছ কবিতা

 

 প্রিয় অসুখ

১.

 ব্যাপারটা খুব সামান্য নয়। এই যে আমি অপটু পায়ে বিকেলবেলায় বেরিয়ে এসেছি শিউলিফুল দেখতে! দলা পাকানো ফুল দেখে মনে করার চেষ্টা করেছি —আমরা কী ছিলাম...কে বা বন্ধ করে দিলো আমাদের সব দরজাগুলো...

 এবং কার্ল মার্ক্স ছাড়া কারোর কথা আমার মনেও এল না

 

২.

অপ্রয়োজনীয় কথার কাছে গিয়ে শুনতে পেয়েছি— নদীর আওয়াজ। হয়তো যৌবনে আমার বাবা ওই নদীর ওপর বসেই ভাটিয়ালি গাইতেন। হয়তো ওই নদীতেই আমার মা চান করতে যেতেন। হয়তো এরপরই শুরু হয়েছিল কর্পোরেট হবার দৌড়...

 এখন বাবার ভিতর যতখানি শীত আছে, ততটা স্রোত নেই

 

৩.

এই যে চুপচাপ থাকতে থাকতেই আমাদের অসহ্য লাগে। এই যে সম্ভ্রমের সিঁড়ি ভেঙে উঠতে উঠতেই আমরা অ্যাডাল্ট হয়ে যাই আর চেয়ে চেয়ে দেখি—বাবার ধীরে ধীরে ভেঙে যাওয়া...

 এরপরই বুঝতে পারি, শিস্ দিতে দিতে যে ছেলেটা গলির মোড়ে মিলিয়ে যায়,তার সুর তত সহজে মেলায় না...

 

৪.

ঘুগনিতে পাঁউরুটি ডোবাতে ডোবাতে আমার রেলস্টেশনের কথা মনে পড়ে। কানে আসে হুইসেল এর শব্দ। আর সটান আমি এগিয়ে যাই...শান্ত করতে করতে এগিয়ে যাই একের পর এক বান্ধবীর ঠিকানা।

 তারপর শরীর গরম হলে আমি নিজেও জাহাজ হয়ে যাই...ভাসতে থাকি কামনার জলে...

 

৫.

 ঠিক বাইশদিনের দুরত্ব জন্ম দিয়েছিল আমাদের খেলাগুলোর। দেশলাইয়ের মতো চিৎ হয়ে শুয়েছিলাম খোপের ভিতর। এখনো বহুদিন ফানুস ওড়েনি আকাশে।একটাও কোনো আঁচড় লাগেনি গাছে। একফোঁটা টাটকা নিঃশ্বাসের জন্য কেউ সিগারেট জ্বালাতে গেলেই, তোর আর আমার সংসার শুরু হবে। আমার ঠোঁটে বারুদ ছিল। আর তোর ছিল সদিচ্ছা।

 

৬.

বাসন ধোয়ার শব্দে ঘুম ভাঙলে, উঠে বসি। মনে হয়, কেউ নেই। কেউ হয়তো ছিলও না। শুধু কাঁঠালগাছ থেকে এক-আধটি পাতা এসে পড়ছে জানালার উপর। আর জানালায় ধুলো জমে

 

বিছানাজন্ম। দেশলাইয়ের উন্মাদনা। এসব মন্দ লাগে না। মন্দ লাগে না, এই ঋতু পেরিয়ে যাওয়া...

 

৭.

এভাবেই একটা ডাকবাক্সের ভিতর ঢুকে পড়ি আমি। এই যে এত অবহেলা... এই যে ঘরে বাতাসা থাকতেও জলের গ্লাস এগিয়ে দেওয়া! এইসব কি যথেষ্ট নয় ?

 

এই যেমন তুমুল ঝগড়ার মাঝে ঘুম ভাঙছে আমার...দাঁত...চুল...নখ খুঁটতে খুঁটতে আমি বাথরুমে চলে এসেছি...

 

এবং এখানেই শুধু শান্তি... শান্তি... শান্তি...

 

৮.

শেষমেশ আপনার ওই আধখানা হাসিটার ভিতর ঢুকেই পড়লাম। ভাঙা ঠোঁট থেকে গামছা করে মুছিয়ে দিলাম তরল অ্যাস্ট্রোনমি। একটা স্বপ্ন বোধহয় এসেছিল...কিংবা এসব কিছু আসাটাই ছিল একটা স্বপ্ন! 

 

 ভেবে দেখো সেইসব ভদ্রমহোদয়গণের কথা — যারা কোনোদিন চায়ের দোকানে যায়নি!  তাদেরকে তুমি ওই আধখানা হাসির বদলে, একটা লোডশেডিং দিও

 

৯.

বন্ধুর হাত ভেবে কতবার না আঁকড়ে ধরেছি ঝালমুড়ির ঠোঙা। মিনিবাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখেছি তিনকোনা হাসি। এখন এই সন্ধেবেলা আমার আয়না দেখার সময়। দেখতে হবে রোদ না পড়লে,  কতটাই না ব্যর্থ লাগে আমার জং ধরা হাসিকে!

 

অতঃপর পায়রা উড়ে গেলে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে— চিলেকোঠার সংগ্রাম

 

                                     

 

 

Comments