বিদুর ব্লগজিন।। য়েনীকে লেখা মার্ক্সের প্রেমের কবিতা।। ভাষান্তর : ঈশানী বসাক
য়েনী ভন ওয়েস্ফালেন
শুধুমাত্র তোমাকে নিয়ে ...
১
সব গান, সব কটা গান আমার থেকে নিয়ে নাও
বড়ো অমায়িক ভাবে ওই প্রেম তোমার পায়ে পড়ে আছে—
দোতারার
সব থেকে মিঠে সুরে
আত্মা আলোর রশ্মির মুখে মন খুলে বসে।
সুরের প্রতিধ্বনি
যদি এভাবেই যত্নে বহুকাল বাঁচতো
যখনই শুনব, অমন ভাবে হৃদযন্ত্র
কেঁপে উঠবে আর
তোমার গর্বিত মন দুলে উঠবে বেশ।
তখন বহুদূর থেকে আমি দেখব কিভাবে বিজয় তোমার আলো নিয়ে এগিয়ে চলেছে ;
বুক ঠুকে লড়ে যাব তবে
তখন এই গান ছোঁবে পর্বতের
উচ্চতা
আমার সব গান সেদিন মুক্ত মনে বাজবে
আর একটা মিষ্টি স্মৃতি স্মরণ করে দোতারাটা
কাঁদবে ...
২
আমার জন্য কোনো খ্যাতিই
স্থলভাগে
আটক নয়
তা আমার মধ্য দিয়ে পুরো দেশ ঘুরে এসেছে
সেই চমক ধরে রাখার, সেই ছুঁড়ে ফেলা শক্তি
যখন জ্বলে ওঠে ঝকমক করে তখন তাকে দেখো দু চোখে
তোমার উচ্ছ্বসিত
হৃদয় থেকে দু চোখ ভরা জল
তারা বয়ে যাবে এই সুরের আবেগে
আমি খুশি মনে আমার আত্মাকে
দোতারার
সুরেলা দীর্ঘশ্বাসে
বিদায় জানালাম;
একটা বেশ নিঁখুত মৃত্যু—
আমি কী পারবো সবথেকে যোগ্য পুরস্কার
জিততে
যাতে করে তোমার সুখ দুঃখের পরতে পরতে মলম লাগাতে পারি?
৩
বাহ্ এই বার এই সমস্ত কাগজ উড়বে
তোমার দিকে ধেয়ে আসবে কাঁপা হাতে
আমার ভিতরটা একটা বোকা ভয়ে আর বিচ্ছেদের
যন্ত্রণায়
মিনমিন করছে।
নিজের তৈরি করা ভয় আর বিপদ
আমার সাহসী পথের অন্তরায়।
কিছুতেই
জিততে পারছি না,
আর যে কোনো আশাই থাকবে না।
যখন দেশ দেশান্তর
থেকে ওই একচিলতে
ঘরে আমি ফিরে আসি শুধু মাত্র ইচ্ছেদের
দেখতে
তখন একজন স্ত্রী আমাকে ধরে রাখেন তাঁর বাহুডোরে
গর্বিতা
তিনি আমাকে পরিচয় করান যেন আমি তাঁর সবচেয়ে বড়ো পুরস্কার।
তারপর বজ্রপাতের
আগুন আমাকে ঢেকে ফেলে অজ্ঞানতায়।
৪
অনুগ্রহ
করে ক্ষমা করে দাও এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ
ক্রোধকে
আত্মার আজ অনেক কিছুই স্বীকার
করা বাকি
একজন গায়কের ঠোঁট পুড়তে থাকে
অসহায়তার
আগুনে।
আমি কী নিজের বিরুদ্ধে
নিজে ঘুরে দাঁড়াবো?
হেরে যাব বিনা সাহায্যে?
সেই গায়কের নাম যদি উঠে আসে যে তোমাকে দেখেও ভালবাসেনি?
তোমার অন্তরের
ঔদার্য এতই যে নীরবে তুমি আমার পাশে
কিন্তু আমি যে ওই দুটো চোখে কান্না দেখতে চাই আমার গানের জন্য
আমার গানকে তুমি সাজিয়ে দেবে বহুবিধ গহনায়
তবে তো সে শূন্যতা
পূরণ করতে শিখবে।
পালিয়ে যাবে একটা কিচ্ছু না থাকার মাঝে!!
( রচনা : অক্টোবর ১৮৩৬)
প্রিয় য়েনী
১
শব্দ খালি মিথ্যা বলে, ফাঁপা ছায়া
জীবনটা এখন লতার মতো ঘিরে ফেলছে
তুমি এখন মরে গেছো, ক্লান্ত
তোমাকেই
আমার সমস্ত শক্তি দেবো
দিয়ে দিতে পারি কী আমার আত্মাকে?
পৃথিবীর
স্বার্থপর,
হিংস্র ঈশ্বর আগেও দেখেছে
মানুষের
আগুন
এই অসহায় বিশ্ব সন্তান শুধুই শব্দের দ্বারা বাড়িয়েছে
সংসার।
যদি ইচ্ছে নদী জেগে ওঠে
বুক চিতিয়ে দৃঢ় ভাবে আত্মার আলো হয়
তাহলে এই জগতের সিংহাসন
থেকে নামিয়ে তোমাকে
মাটির কাছে আনবে...
সমস্ত হাওয়া অগ্রাহ্য
করে তবে
অন্য এক জগতে পরিণত হবে যা তোমার উপর বেড়ে উঠবে।
য়েনীকে
১
য়েনী তুমি হয়তো ঠাট্টা করো যে আমার সব গান তোমাকে নিয়ে কেন?
কারণ তুমি যখন থাকো আমার পাল্স বেড়ে যায়
আমার গানগুলো
হতাশ আবেশে ঘোরে তোমাকে ছাড়া
আমি তোমার নামের প্রতিটি
অক্ষর উচ্চারণ
করি
ঠিক যখন তুমি আমার গানকে সুর দাও।
যখন ঈশ্বরের
থেকে নিঃশ্বাসের
দূরত্ব শূন্য
তোমার মিষ্টি নামের হিল্লোল
আমার কানে রিন রিন করবে
যেন দূর থেকে শুভ আত্মারা
শুভেচ্ছা
জানাচ্ছে
যেন বেহালার
রূপ বেঁধে দিচ্ছে আমাদের এক সুরে
২
দেখো আমি অন্তত হাজার বই শুধুই তোমার নাম দিয়ে লিখে যেতে পারি
প্রতিটি
লাইনে তোমার নাম তবুও কত কথা লুকনো থেকে যাবে
আমার সমস্ত শোক যেন অপার্থিব
মায়ায় সুখ হয়ে যাবে
আলো পড়ে জ্বলবে আমার হৃদয়
এই সমস্তটা
আমার শুধু
আমার জীবন, আমার জ্ঞান
আমি ওই দূরের তারাদের
মধ্যেও তা পড়তে পারি
মেঘের ডাকের মতোই তা ফিরে আসে আমার কাছে
আমি যুগ যুগ ধরে লিখব
ভালবাসা
মানে য়েনী
য়েনী ভালবাসার
আরেক নাম
( রচনা : নভেম্বর ১৮৩৬ এবং ১৯৬২-তে রুশ পত্রিকা ইনোস্ত্রান্যায়া লিতারেতুরা-র প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত)
Comments
Post a Comment