বিদুর ব্লগজিন : পৌষালী চক্রবর্তী-র গুচ্ছ কবিতা
পৌষালী চক্রবর্তী-র গুচ্ছ কবিতা
শয্যা
পুরোনো হেমন্তের জলাশয়ে নেমেছে মধুমাঝির নৌকা
অতীত কুয়াশা ঠেলে...
হিমে হিমে উড়ে যাচ্ছে নক্ষত্রের মন
দিগন্তের নিভে আসা আলোয় ফুটে উঠল একটি প্রাচীন মুখ
মধুক্ষরা পৃথিবীতে
দীপাধার ঘিরেছে কিছু অন্ধ শামুকখোল ।
শয্যা ঐ নৌকাগর্ভে......
ত্রিতাপ হরণের বাসনায়
সভ্যতার দিকে বোজা রয়েছে তার তৃতীয় চোখ।
নষ্ট লেখা
কবিতার বিবর্ণ মুখের মত তারা নিভে যায়
গাছে গাছে ভোর নামে মহাকাশ থেকে
আর এ পাড়ায় রটে যায় বাক্যের দুর্নাম খুব
নষ্ট শ্বাস ছেড়ে গেছে সে পরবর্তীর গায়ে।
কলঙ্কের সমুদ্রে সাঁতরে তুলে আনি শব্দ ভর্তি বেলজার
তীরে পড়ে গঠনতন্ত্র,
কবিতার গর্ভপাতের এমন ভোরে ফিরে আসি
বাল্মীকি'র উচ্চারণে ।
ঈশ্বরের গৃহ
কোনো কোনো দিন মনে কতরকম হয়।
স্কুলবাড়ি, পুরোনো লাইব্রেরি ঘরের পাশের কদম গাছকে
মনে হয় খ্রিস্টপূর্বাব্দের।
অমৃতের পুত্র তখনও বেথলেহেমের শান্ত, নীরব যীশু ।
পৃথিবীর জটিলতা কম।
জানার পরেও লাস্ট সাপারে সঙ্গী জুডাস
এমন অকপট শত্রুতার মুখোমুখি থেকে মহামানব চলে আসেন
আমাদের গির্জাঘরের স্টেইনড গ্লাসের জানলায়,
খোদিত হয়ে ওঠে 'ঈশ্বরের গৃহ সর্বজাতির জন্য'।
অচেনা
শিকার উৎসবের অযোধ্যায় দাঁড়িয়ে
বুদ্ধ জন্মের কথা মনে আসে।
নিথর মাটির রেখায় তখনও ফোটেনি
যুদ্ধাস্ত্রের জটিল দাগ
তীরে বিষের ভাগ কম ছিল
এবং ষড়যন্ত্রের মুখেও দূত অবধ্য ।
অকপট সারল্যে শত্রুপক্ষের মুখোমুখি হওয়া যেত ।
সর্বত্যাগী ভিক্ষু রাজঅতিথি হলে মনে হত
হৃদয়ের ভাস্কর্য ততদূর জটিল নয়।
কোনো এক চন্দ্রোদয়ের মাঠে বিলীন হয়ে যায় ভিটেমাটি,
মনের জটিল কাটাকুটি দেখে অতীতচারি হতে সাধ যায়।
মফস্বল
ঝিঁঝিডাকা মফস্বল থেকে উঠে আসছে অনুজ্জ্বল ট্রাক
অমধুর কেকাধ্বনি থেমে গেলে
পুরুষের কান্না ভেসে আসে
সরগমবিহীন।
ঘিঞ্জিবাজারে পড়ে থাকা পচা সব্জির মতো নষ্ট হয়ে যাই।
প্রভু হে, সে ট্রাকে থেঁতলে গেছে বেকার মগজ;
একটি সাদা পাতা ও আরেকটি নষ্ট কবিতার অপেক্ষায়।
Comments
Post a Comment