সম্রাট পাল-এর কবিতা

সম্রাট পাল-এর গুচ্ছ কবিতা 

 

বর্ষবলয়ের চিহ্নরূপ

 

দুঃখ পাবে জেনেও মানুষ

নদীর দিকে ছুটে যায়

ওগো গাছ, তুমিও কী মানুষের মতো

এমন অসহায়..

 

 

গাছের অবয়ব থেকে কিছু পাতা রোজ ঝরে যায়। নিষাদ থেকে হাওয়া জাগে। ভেষজ ভ্রমণ শেষে তুমি এসে থামো শেষ বিকেলের ঘাসে। আলো মিইয়ে আসে, নরম হয় মেঘ। গাছে গাছে ঝুলে থাকে মানুষের পাপ-পুণ্যের লিপি, যেন সংসার থেকে মেয়েরা এসে তুলে নিয়ে যাবে। তোমাকে পাপের কাছে রাখি, কখনো পুণ্যের কাছে, কখনো-বা নিজের কাছে। সন্ধ্যার দ্রোহস্রোত এসবের দিকে মিথুন পাঠায়..

 

জন্মের অতল থেকে মাটি খুঁড়ে শেকড়ের দিকে পথ সৃষ্টি করেছ। এখন খরার সময়, গাছের শরীর থেকে চোখ নামাও। এসো তোমাকে দেখাই বৃক্ষজন্মের মৌন যন্ত্রনা। অথচ প্রেম ক্ষয়ে গেছে কতকাল আগে, জিহ্বায় শ্বেত স্বাদকোরক... আকাশের দিকে চেয়ে আছি, বর্ষাকালের দিকেও..

 

গাছের আয়ুর মতো দুর্মূল্য আমাদের দীর্ঘযৌবনাতীত ভালোবাসার কথা। কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ির লাল যেন বিকেলের দুলে পড়া গায়ে বিছানো। তবু গাছেদের বড় অসহায় লাগে... মাঝে মাঝে ঠিক যেমন নিজেকে লাগে। গাছেদের কোন পোশাক নেই, জুতো নেই। ছায়ার ভিতর অতলান্ত ঘুম নামে-পাখিশরীরে, যেন সদ্যজন্মা শিশুর পূর্বজন্মের স্মৃতি। একদিন আমরাও উন্মুক্ত হবো...উন্মুক্ত হবে পৃথিবী, গাছে গাছে ভরে যাবে রক্তিম রেণু...

 

খসে পড়া হলুদ পাতাদের সাথে জীবনের আলোচনায় বসি। ক্রমে বাতুল হয় সময়। তোমার নাভি থেকে যে নুতন চারাটি ভূমিষ্ট হবে, তাকেও দেখি। কান পেতে শুনি তার জন্মকান্নার উদ্ভাস। এই পৃথিবী এক বিস্তৃত জরায়ু— এই প্রবোধ হলুদ পাতাদের, নুতন চারাটির, তোমার অথবা আমারও। তবু কী অদ্ভুত উদাস প্রতিটা শেকড়ের মাটি!

 

ও গাছ, তোমার বল্কলে ঝড়ের চিহ্ন থেকে প্রশাখার উপনয়ন হয়— অনঙ্গমোহন বাতাসের দিকে, অত্যাশ্চর্য রোদের দিকে। স্বপ্নবিচ্যুত বালকের মতো ছায়ার ধ্যান আঁকি সারাদিনমান। জলের দিকবলয় থেকে স্নান অবধি ছোটাছুটি করছে তপ্ত দুপুর, মায়ের আওয়াজ। পাখির ডাকে যতবার পাখি হতে চায় মন, তার অধিক ধীরতায় নুয়ে থাকি ছায়াপ্রোথিত পুকুরধারে। ও গাছ, ডোবাও এ জন্মশ্রুতগান, ডোবাও সমস্ত নিত্যতা, যাবতীয় ধূসর হিংসারব...

Comments