বিদুর ব্লগজিন।। সোনালী ঘোষ-এর গুচ্ছ কবিতা


সোনালী ঘোষ-এর গুচ্ছ কবিতা 



"কুছ নহীঁ হ‍্যায় তো অদাবৎ হী সহী"


১.রুহ্


ময়ূর পুচ্ছ পড়ে আছে হৃদয়ের পাশে,টোকা দিলে ঝরে যাবে মহিমা সকল, অথচ কিভাবে বলি, মনে না পড়লে আর সোজাসুজি উত্তর...অখ‍্যাত হাটে হাঁড়ি ভাঙে পুরুষোত্তম, বীতশ্রদ্ধ চিত্তে নৈঃশব্দ যাপন শুধু...ধবল পাল তুলে কে যায়, ভাদুগানে ঝরে পড়ে মধু ; শনবনে ঝিরিঝিরি হাওয়া, শুভ্র রাজহাঁসের পাখশাটে বিন্ধ‍্যবাসিনী মেয়েটির সুখ, মহুলের রস আর গুয়াপান ঠোঁটে। কৃষ্ণদাস কতদিন হলো,পূজ নি তাহারে।



২.চর্যা


মৌন,দুধেলা আকাশে একঝাঁক বক।নেমে আসে আজন্ম ঈর্ষা।হাত বাড়ালেই সোনামুখী রোদ,এই মনের ভেতর এত জলতরঙ্গ,আশ্চর্য সুর। কোন নেশা ছড়িয়ে যাচ্ছে , তার নাম ধরে ডাকি, ঝরে পরে অসংখ‍্য ফুল। আমি তার গুনগান গাই, দীপ ধুপ জ্বালি, একমনে গড় করি।এত কঠিন সুরে কথা বল কেন? এত সন্তাপ এত দহন... হাওয়ায় রটে গেছে, ভাসানের গান,
ঘাট ছুঁয়ে চলে যায় বেহুলার ভেলা, ভেসে যায় ঘর দোর... তুমি কি শেখাবে, তার গূঢ় অর্থখানি।


৩.ধার্মিক বলেই জানি


বকের মত নিঃস্ব পাখি দেখি নি আর

ঝিম মেরে থাকা প্রসারিত গ্ৰীবায় রক্তহীনতায়
ধুঁকতে থাকা মেয়েটির কাঁকনহীন হাত ...দীর্ঘ ঠোঁটটি
মাছেদের মৃত্যু যন্ত্রণায় অভুক্ত পেটের নাব‍্যতা মাপে

এই সব ধবল শুভ্র পালক
উপবীত পরিহিত ধার্মিকের কথাই বলে।


৪.কালকেতু ব‍্যাধ


নীলহিম, অন্তিমসিঁড়ি ছুঁয়ে যায়,নীলকন্ঠ। ত্রিকাল দুর্বোধ‍্য হলে কখনো বিষাদতন্ত্রে ধারণ করে শুকনো খটখটে পাহাড়; এক কিশোরী সে পথে ঝুমুর শব্দে। আস্ত একটি কেউটে হাঁসুলী তার।ছলাৎছল শব্দে বিষ রাখে, মজে যাওয়া খাঁড়ির ভেতর, তেমন মরদ কই, জলে মনোলোভা হংস গ্ৰীবের মত উন্নীত... স্তব্ধতা, তৃষিত হৃদয়ের কাছে, মায়াবীজ রাখে... অনিবার্য প্লাবন নেমে এলে দংশনকাতর হয় নাভিশ্বাস... দহন অথবা সুখ অন্তিমে মৃগয়া করে কালকেতু ব‍্যাধ...


৫.রঁদেভু

চন্দন নিকানো আলোয়,হতদরিদ্র উঠোনে পায়ের ছাপে ধানের শিষ। হুবহু ছোট বেলায় লন্ঠন জ্বাললে কাঠচাঁপার সুবাস। এই দ‍্যাখো কুলুঙ্গিতে পাখি।কত অন্ধকারে চুপচাপ, কপালের লাল টিপ বেয়ে কিশোরী আয়না আঁকে... চাওয়া বলতে এইটুকু । কেউ এসে অতর্কিতে পাশে দাঁড়ালে পাল্লা বন্ধ হয়ে যায়, গোলঞ্চের ঝোপ থেকে উড়ে আসে পাতা সুদূর অতীত জেগে ওঠে, খুব মন দিলে, অর্থ হীন প্রলাপের চাদর। জবুথবু ইন্দ্রিয় ঘাই মারে।আনমনা বাতাসের রঙ ভারী, পাশে শুয়ে থাকা পংক্তিমালায় লঘু চালে জীবনানন্দ ডাকে " মরিবার হল তার সাধ"...
 

 

Comments