বিদুর ব্লগজিন।। তিন জন মাল্লা।। অন্তর চক্রবর্তী * সৌমাল্য গরাই * ঋতুপর্ণা খাটুয়া।।
এসেছ,
আরোগ্য?
১
অসুখী সে হাওয়াকল। ব্যথা নয়, উপশম ভেবে
নিতে পারো, সমস্ত ঝড়ের দেশ ফিরে গেছে
ধুলো হাতে। অসম্ভব হয়ে
তেমনই তোমার হাড়? আশরীর ক্ষয়ে
হেস্তনেস্ত দূরে ঠেলে এতকাল নিরালা সয়েছে—
বজ্র নয়, নয় শিস্; ছায়াকে মসীহা করে নেবে
২
চেয়েছ শারদ, আজ। নাড়িছিন্ন এহেন রোপণ
অদূর আগামীময়, পারিজাতভ্রূণ হোক
ভ্রান্ত দুই আয়ুর নিষেকে
ধূসর এ দাহগাছ, ভস্মসুখ মেখে
ধোঁয়ার নিছুনি জুড়ে ছড়িয়েছে ধবল। স্মারক?
সহজ প্রতিমা এক; তুমি ঋতু, অকালবোধন
৩
থাবা তো তোমারও ছিল, উজাগর। শ্বাপদ-জনম
ঘিরে যে হরিণী ছিল ভীতপ্রাণ, তারই স্মৃতি
ছিঁড়ে ফেলে রক্তমাংসদিন
চেয়ে আছ সাবলীল, হালুম-বিহীন
হাঁ-এর ঈষৎ ভেঙে হও ধীর। ডোরার নিভৃতি?
ছোঁয়ামাত্র জল হ’ল; জাগতিক, সমূহ দুর্গম
সৌমাল্য গরাই-এর তিনটি কবিতা
ঘুমের বিশেষ ক্রিয়াকলাপের মধ্যে দেখেছি অদ্ভুত
যেন এক রাক্ষুসী
স্বরূপা রাত রক্ত চুষে খায় আর
আমাকে হঠাৎ
নিয়ে যায় মৌন সমাধিতে
লক্ষ-লক্ষ
শব থিকথিকে জীবাণুর ভিড়ে বলে
মৃতের সন্তান
এসো, হনন শেখাই
প্রবঞ্চক,
কৃতঘ্ন, গোঁয়ার,
তুমি কী
জানো না, নৈরামণি পাখিটিকে পুড়িয়েছ গতকাল
তার মাংস,
হাড় লহু, মসৃণ ডানায়
নিহত করেছ
ভাষা, আমাদের অলিখিত ইহ পরকাল
অনাগতবিধাতা
কিছুই বোঝো না
তুমি, কীভাবে যে বোঝাই
নিরক্ষর অনুভূতি
ধিকি ধিকি জ্বলে
টিমটিমে
সন্ধ্যাপ্রদীপের নীচে
সংক্ষিপ্ত জীবন
কেটে যায় নিদারুণ অন্বেষণে
তোমার অর্ধেক ছায়া
মুখে নিয়ে চলে গেল
শ্রুডিংগারের ওই
চতুর বিড়াল
বাকি অর্ধজীবনের
ঘেরাটোপে যৎসামান্য সাহস পাঠিও
না পাওয়া তোমাকে
ঘিরে যেন আজীবন অশ্রু ফেলতে পারি
তবু দ্বিধা হয় মনে,
কী হবে হঠাৎ
তোমার রক্তাভ
আর্তনাদ চেটে নিয়ে
ফিরে আসে যদি সে বেড়াল...
বিম্ব থেকে সরে পড়ে
আলো। অলৌকিক মহাযান সময়কে স্থির হতে বলে।
এসময় অন্ধকার একজন অন্ধ ব্যক্তি। তার
ছেঁড়া ঘুড়ি, উড়তে না পেরে, ভাসমানতা টিকিয়ে রাখতে ঘড়ি হয়ে ঝুলছে। ঘড়িটির
ত্রিনয়নী কাঁটা, তিনদিক পাক দিয়ে নদী পাহাড় ও একটি বিস্মিত আকাশকে ছুঁয়ে। স্থিতি, বয়স ও গতি সমান্তরালে এভাবে হাঁটছে,
যেন শৈশব, কৈশোর ও প্রবীণ তিনরকমের স্বপ্ন কাঁধে নিয়ে হাঁটছে
সময় জানে
চলে যেতে হবে প্রাজ্ঞ,ঋজু লাঠি হাতে নিয়ে। প্রায়ান্ধকার হলঘরে পর্দা খোলে।
জাগতিক
ইন্ট্যারভ্যালে কালো ঘোড়া এসে দাঁড়ায়। পিঠে রোদ্দুরের সাত রঙ। আস্তাবল থেকে যীশুকে
পৌঁছে দেবে বেথেলহাম শহরে— সেখানে ভালবাসা বোনা হচ্ছে পাশাপাশি ক্রুশকাঠও। এরকম
মুহূর্তে দৃষ্টিহীন গান গায়।
মুহূর্ত ভেঙে গিয়ে
পরকাল আসে। হারানোর বয়স নামে। খেলা শুরু হয়....
নির্জন
অলীক মাঠে প্রত্যেকে কিছু না কিছু ফেলে আসে—কিন্নর
বয়স, অবেলার ঋতুডাক, মর্মর বিরহমাহ, প্রপঞ্চ মধুর দিন, প্রথম কান্নার পর স্তনের আস্বাদ, অন্তিম শীৎকার। প্রিয় খরগোশ দৌড়।
শুধু চিরজীবনের মতো
অন্ধ হবার আগে কনে দেখা আলোয়
একটা ম্যাজিক দেখব বলেই প্রত্যেক অন্ধের ভিতর থেকে
আমরা ওই আলোটিকে ভ্যানিশ করে দিতে চেয়েছি
ঋতুপর্ণা খাটুয়া-র তিনটি কবিতা
খুকুমণি ওঠো রে
যেভাবে বাঁশের মাচা বেয়ে
উঠে গেছে গহনাবিহীন
স্বতন্ত্র উচ্ছের গাছটি,
ওভাবে বাবার হাত ধরে
বড় হয়ে উঠি।
কাঞ্চন জন্মের স্পষ্ট ঋণ —
রোদ বাড়ে।
সংসারে ও উপাচারে
আমি মায়াবী অন্তরিন।
অন্তিমে
সদ্যফোটা গোলাপ কলির
মতো মুখ করে, মা শুধায়...
কী এনেছিস!
দেখি কালো পরিধেয়
সমেত যাকিছু উপার্জন,
সব পুড়ে ছাই ছাই।
বাঁজা মাঠে, ধানের কালো শিষ!
অর্জিত ভালোবাসার কিছু মুখ,
চারিপাশে ফুটে ওঠে
আসন্ন যুদ্ধের পর
(১)
অগুনতি ক্লান্ত সুর তূর্যের শাণিত গহ্বর থেকে উঠে আাসছে। সুরে উদ্দীপিত কিছু পাথর ইস্তাহারের দূর্গ ভেঙে ঢুকে গিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যুদ্ধ ঘোষণা হয়ে গেছে, সেই পত্র পৌঁছেছে সঠিক সময়ে, তবুও হ্রেষাধ্বনি ম্রিয়মান এখনও।
(২)
বিগত দিনের রণক্লান্ত কথা শতদল হয়ে ফুটে বসে আছে সংবাদপত্রের নরম পাঁকে। রাতে কীভাবে কলি হয়ে গেল তারা, কোন সূত্র ধরে...
(৩)
ঘুমঘোরে কী যে দেখি। শায়িত মৃত সৈনিক , নাকি গভীর ঘুমে বুদ্ধ। তোমার পদতলে কতক নিস্পন্দ শব্দ স্নেহাকারে সাজাই, তথাগত
ওদের পাদপদ্মের ছায়াটুকু কেড়ে নিও না—
(৪)
শবদেহে আরোপিত ফুল শুয়ে আছে বাগান বিচ্ছেদের গোপন কাতরতায়।
Comments
Post a Comment