বিদুর ব্লগজিন।। অর্ণব বসু-র কবিতা।।
নদী পেরোনোর পর
শুক্রবার এলেই পালটে যায় তোমার হদিশ,
নিজের পেটের মধ্যে লুকিয়ে রাখছি দুপুরের খিদে—
আর একের পর এক মেট্রো রেল ছেড়ে যাচ্ছে আমায়।
বাগান পরিচর্যার নিড়ানি হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছি এযাবৎকাল অথচ
গলার স্বর কেঁপে যাচ্ছে মাটি তোলার কথা ভাবতে গিয়ে
এত নীচে টানেলের ভেতর তোমাকে বিশ্বাস করি—
ইচ্ছে হয় খুব
টাঙিয়ে রাখা অন্ধকার থেকে ঠিকরে আসে সরল আলো
নরম বুকের ওপর
তিসিফুল, হিম হিম বাতাস—
কেউ নেই পাশে,
উন্মাদ সকালে
খাবি খেতে খেতে ডুবে যাচ্ছি তোমার হাসির ভেতর,
দেখি— আগুনের ভেতর আগুন। জলের ভেতর জল।
ভরদুপুরে পালটে যায় তোমার স্বভাব, গান বেজে ওঠে, মাধবীলতার গায় হাত রাখলে শান্ত
হয়ে আসে চারপাশ,
হাত রাখো মাথায়,
ভাসিয়ে দাও—
ভেসে থাকতে ভালো লাগে। বেহায়া জলের ওপর।
জীবন, তোমাকে
তোমাকে সহবত শেখাই। শেখাই আলো থেকে আলোয় যাওয়ার পথ। যে-পথ নদীভাঙা, মিশেছে বকুলের কোলে। পেরোতে পেরোতে ছাপ পড়ে, পায়ের। গভীর। নতুন দুঃখের
আসরে পুরোনো দুঃখ বিলোপ পায়। গান আসে। ভেতর ভেতর চেনা সুর। ব্যথা দিয়ে ব্যথাকে জাগিয়ে
রাখার গান। উপশমহীন। মাথায় তপ্ত রৌদ্র। অচেনা ভয়ের পাশে সবুজ পোকাদের ওড়াউড়ি। দুপুরের
ঘুম উড়ে যায়। ফাঁদে তো অনেক জড়ালাম। এবার শুধু, তোমাকে চাইছি। সামান্য জলের পাশে। ছুঁয়ে
দেখবে না?
হাঁটার পথে কিছু দুঃখ থাকে। মেরামতহীন ভবিষ্যতে আরও একটা ভুলের আশায়, খানিক এগিয়ে যাই আহিরীটোলার দিকে। ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলার পুনরায় চেষ্টায় আমিও কী কিছুটা দায়ী নই বলো! বেড়ে ওঠা গাছ, সামান্য আকাশের থেকে কী চায়! অপার আলো আর কিছু হাঁ-মুখ বৃষ্টি। পরিত্যক্ত নৌকার গায়ে সরল জলের দাগ। সীমানা ভাঙে। মরে আসে ঢেউ, মরে আসে জল, অন্য কোনও পথে তছনছ হয়ে যায়। সে পথে ডুবে গেছে বিবাহের সানাই। নতুন উচ্ছ্বাসে ডুবুরি পাঠাবে না? নাবিকের কম্পাস। ঘুরে যায় নতুন শহরে। তোমার ঠিকানায়। সামান্য আলোর আশায় মানুষ দেখি। দেখি- নতমুখ, আধখাওয়া ফলের গায়ে পোকাদের বিষাদ। ঘন ও জটিল। শীতার্ত সন্ধ্যায় পাখিদের মনে হয় দূরের যাত্রী। ডানা ঝাপটায় নতুন কৌশলে। বাসায় ফেরে। তুমিও কি ফিরে যাবে আলেখ্যসমর্পিত পাটের ক্ষেতের ভেতর? কড়ে আঙুলের পথ। যেন বা বেঁকে যায়, সহসা মৃত্যুর দিকে!
Comments
Post a Comment