বিদুর ব্লগজিন।। মহিউদ্দিন সাইফ।।



 

মহিউদ্দিন সাইফ-এর কবিতা 

 

রং বিষয়ে

 

এই যে মুঠিভরা আত্মমগ্ন হলুদ, তারিভরা ছাঁচিতেল

আর কিয়ালা করা সংসারবিধি

তোমার সম্মুখে রেখে মুখ ঢাকি লাজে।

কী যে দেখাব !

বন্ধু-উদাস বিকেলে দুটি চোখ রেখে দরোজায়

বসে বসে অদর্শন লোভে

এক আনকা সম্ভাবনার ছবি ভাবি

ভাবতেই থাকি…

নির্ভাষার দ্যুতি থেকে রচিত

চোখের ঘোর কালিমার থেকে পৃথক

নিবিড় উত্তাপমগ্না এক অবগুণ্ঠন

খুলতে খুলতে কত যে খুশবু নিয়ে খেলে যায় স্বাগতা হাওয়া

আমারই দিলের থেকে উদ্ভূতা স্বাগতা বাতাস,

কত অখণ্ড প্রবাহ বয়ে যায় অস্পষ্ট ভূমির পাশ দিয়ে…

তবু এত এত উদিত চিত্র পায় না রং কিছুতেই

প্রকৃত রূপ আর রেখা

কিছুতেই পায় না তারা…

 

সেই নির্ব্যবহারের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখি

সম্ভূত রং বিকিরিত হয় না একটুও

ফলে দোজাহানে সাধারণ্যে খালি খালি বর্ণের মোহ পড়ে থাকে…

 

 

লিলুয়া হরিণা

 

দেখো, এই অপাবৃত জল আর  নির্মল সাঁতার

এ শুধু জল শুধু সাঁতার বেহুড়া প্রবাহে…

তবু বৈদেহী সুধাপান থগিত রেখে এক শামলা পলে

দেখেছি লিলুয়া হরিণা

 

অরদিশ হাওয়ায়  হাওয়ায় ঝরেছে চিত্ররূপ তার

শ্বেত রক্ত পীত কৃষ্ণ নীল ও হরিৎ

সংশয়ের পারা নিমশুভ্র মহাকাশে

অষ্টদ্রব্য পিষে পিষে অনুভবসিদ্ধ সুবাস কেবল

রচেছে দুনিয়াতে

কেবল নিঃসীম চৈত্রমাসে ডাঙ্গর শিশুরা হেঁটে গেছে তুলতুল পায়ে

আর কোমরে ভেলাইকড়ির বোলে বোলে মাতেলা

জলের খোলস থেকে বেরিয়ে এসেছে দিগর হরিণা সুন্দর

 

দেখেছি

মাঠে মাঠে ছুটে যাচ্ছে খেলতে খেলতে

হরিণা, তার শিশু সপ্ত পুতি

বুড়ো এক সুফি বাবা আজিজের দিকে…

 


অপেক্ষায়

 

ওদের সবার সাথে কথা বলে জানা গেল

মানুষের সবচেয়ে বড়ো শক্তি শুদ্ধ নীরবতা,

কিছু না বলে শুধু স্নিগ্ধ নিরীক্ষণ বাকুণ্ডি জাহানে

 

এই অমোঘ পাশুপতটি বহুকাল আগে

ছিল হেকিম লোকমানের সৌন্দর্য ও শক্তি যুগপৎ,

কিন্তু আমার দাদু বলতেন এটি দুর্বলতা বটে,

কিছু বলে যেতেই হবে দীনদুনিয়াতে

শরামতে এমনি ফরজ…

তাই তিনি সারাটা জীবন ব্যয় করলেন বধিরকে হাদিস শোনাতে

আর অন্ধকে দেখালেন সিরাতুন নবীর আয়না

 

পরে এই আকিদা আমার বাবার মধ্যেও সংক্রমিত হল…

ফলে দিন রাত তকরীরের মাঝে থাকতে থাকতে

আমরা সপরিবারে নীরবতা ভুলে গেলাম…

 

এখন রাত ও দিন

নীরবতা বিষয়ে উচ্চনাদে কথা বলে যাচ্ছেন আমার বাবা

তাঁর মরহুম বাবা ও তাঁর মরহুম বাবা,

আমরা শুদ্ধ নীরবতার জন্য বসে আছি

কত কত যুগ…



Comments