বিদুর ব্লগজিন।। সুচেতনা চন্দ-র কবিতা


সুচেতনা চন্দের কবিতা।


আমি ছেড়ে দিতে পারি।

ছেড়ে, চলে যেতে পারি।

হাড়ের ভেতর অবধি ছুঁচ চলে যায় না।

বাসের জানলার ধারে

শীত আমাকে হাজার চোখের থেকে আড়াল করে না।

 

শহরের পার্কে পার্কে বাহারি ফুল

ফেলাছড়া আদিখ্যেতা ঢেলে, রাস্তা ধুয়ে দিয়ে জন্ম চলে যায়

কোত্থাও এক মুহূর্ত দাঁড়াতে হয় না আমাকে।

 

শব্দ নিয়ে লোফালুফি খেলা চলে

অর্থ আর অনুভূতির-

আমি সাদা দেওয়ালে হিসেব কষি,

আস্তিনে মুছি বেখেয়ালি গলতি সব আমার।

 

গাড়ি ছেড়ে দেবে নিশ্চিত জানার পর...

কেউ কেন আটকালো না!

 

আমি চলে যেতে পারি।

আমি ফেলে চলে যেতে পারি।

আমি সব ফেলে চলে যেতে পারি-

এ ছাড়া ঘুমপাড়ানিয়া গানে আর কোনো কথা থাকে না; আজকাল।

 

সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে

পেনের ঢাকনি ভাংগা আর ছেঁড়া চপ্পলে গোটা চত্ত্বর থই থই

তেলতেলে মাটি

আগুন নেভার পরের সময়টা খুব বোরিং লাগে ইদানীং

ধ্যাঅ্যার...

আমি চলে যাবো

 

রোমকূপ দিয়ে বাধ্যতামূলক শান্তি ঢুকছে

খয়েরি, বাদামী, বেগুনী নয়

রঙ দেখলেই চামড়ায় জ্বালা করার কথা

করেও

ধ্যাঅ্যার...

আমি চলে যাবো

 

কোনো কোনো পুকুরে নাকি হেমন্তে নীল জল নামে—

এসব হয় না। কক্ষনো হয় না।

ঘাস, ফুল, প্রজাপতি

কক্ষনো হয় না, আর।

কিন্তু

চোখের ভেতরে চোখ দিলে

যদি এক চিলতে জ্যোৎস্না পাওয়া যায়

অনন্ত ধূসর জ্যোৎস্না

তাহলে হয়তো থেকে যেতেও পারি

 

বলা মুশকিল…


 

ভালোবাসতে চেয়ে, গোটা শরীর

চন্দ্রাহত দীঘির মতো নিশ্চল হয়ে যায়

 

পাঁজরের আশেপাশে কারা

উন্মাদের মতো নাচে

মাথা ঝাঁকায়, গড়াগড়ি দেয়

 

ধাপ বেয়ে উঠে এলে

অক্ষরের নাভি নদীজলে দোল খায়

শান্তি, শান্তি পেতে

 

অন্ধ করে দাও

অন্ধ করে দাও

সম্মোহন ভেদ করে চলে গেল যে অন্ধ বৈরাগী

সে আমাকে ফেলে গেছে পাথরের ওপর

 

বুঝি, বুঝি।

প্রতিবার পরিযান ভিন্ন খোঁজে হয়।

 

ভালোবাসা, রক্তবীজ—

বর্ষায় শ্যাওলার মতো বাড়ে

অনাদরে।

শরীরের সমস্ত ফাটলে ঘিনঘিনে সবুজ হয়ে বাড়ে।

 

কুষ্ঠ রোগীর মতো দুনিয়ায় ঘোরে

সকলেই দেখে। চোখ মুছে নেয়।

নিরাময় করতে পারে না।

Comments